ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুলের যত্ন নিলে ও এই হেয়ার কেয়ার টিপস পেলে চুল আরো সতেজ সুন্দর মসৃণ হয়ে উঠবে। ত্বক ও চুল সুন্দর থাকলেই আমরা সবার সামনে পরিপূর্ণভাবে সুন্দর হয়ে উঠবো। আমরা সবাই চাই নিজেকে সবার সামনে সুন্দর দেখাতে। তার জন্য চুলের যত্ন ও ত্বকের যত্ন অবশ্যই আমাদের নেওয়া উচিত। আর অন্যের মুখে নিজের প্রশংসা শুনতে কার বা না ভালো লাগে বলুন? তাহলে আজকের জেনে নেওয়া যাক চুলের যত্ন কিভাবে নেবেন। চুলের যত্ন নেওয়ার উপায় আলোচনা করব। চুলের যত্নে 20 টি Hair Care Tips At Home আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব। আপনারা অবশ্যই বাড়িতে এগুলো ব্যবহার করবেন। তাহলে আপনাদের চুল সিল্কি লম্বা সুন্দর ঝলমলে ঘন হয়ে উঠবে। যার দ্বারা আপনাকে দেখতে সবার থেকে সুন্দর লাগবে।
Table of Contents
#১. চুল পরিষ্কার রাখুন
সর্বদা চেষ্টা করবেন চুলকে রোদ জল এইসবের হাত থেকে রক্ষা করার। নানা রকম ধুলোবালি সূর্যের তাপে চুলের ক্ষতি হতে পারে।
চুলের যত্ন অবশ্যই নিতে হবে তাই- চুলে অত্যাধিক তাপ লাগলে চুল রুক্ষ হয়ে যায় এবং বৃষ্টির জল পড়লে চুলে জট পাকিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এর জন্য চুল উঠে যেতে পারে| চুলের গোড়ায় দীর্ঘদিন ধুলোবালি জমতে থাকলে চুলের গোড়াতে ফাঙ্গাস হয়ে যেতে পারে এর ফলে চুল উঠে মাথায় টাক পড়ে যেতে পারে|
এইসবের হাত থেকে চুলকে রক্ষা করার জন্য সর্বদাই বাইরে বেরোনোর আগে টুপি কিংবা ওড়না মাথায় কিংবা ছাতা ব্যবহার করতে পারেন এর ফলে আপনাদের চুল সুরক্ষিত থাকবে। আর চুল ওঠাও বন্ধ হবে।
#২. চুল ভেজা অবস্থায় সঠিক যত্ন নিন
স্নান করার পর আমাদের চুলের গোড়া নরম হয়ে যায় ও চুল ভারি হয়ে যায়| এই সময় চুল ভঙ্গুর হয়ে যেতে পারে তাই চুলে টান দেবেন না| অন্যথায় চুলের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে|
এই অবস্থায় চুল আঁচড়ালে চুল উঠে যেতে পারে তাই ভেজা অবস্থায় চুলে চিরুনি দেওয়া থেকে বিরত থাকুন| যদি একান্তই চুল আঁচড়ানোর দরকার থাকে তাহলে কোন তেল বা হেয়ার সিরাম ব্যবহার করে তারপর চুল আঁচড়ে নিন।
#৩. নির্ভুলভাবে চুলে শ্যাম্পু করুন
প্রথমে একটা চিরুনি দিয়ে চুল আজড়ে নিন|চুলের লেন্থ অনুযায়ী কিছুটা পরিমাণ জল নিয়ে চুল ভিজিয়ে নিন| তারপরে মগ বা বাটির মধ্যে সামান্য পরিমাণ জল নিয়ে তাতে শ্যাম্পু মিশিয়ে নিন| শ্যাম্পু ভালো করে জলের মধ্যে মিশিয়ে নিন|তারপর কিছুটা শ্যাম্পু নিয়ে মাথার গোড়ায় ভালো করে মাসাজ করুন| ১০ থেকে ১৫ মিনিট ভালো করে মাসাজ করে শ্যাম্পু করে নিন। অবশ্যই মনে রাখবেন শ্যাম্পু করার পর নরমাল জলে চুল ধুয়ে নেবেন|
সপ্তাহে ৩/৪ দিন ভালো শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করুন। তাহলে চুল ওঠা বন্ধ হবে চুলে ধুলোবালিও কম জমবে|
#৪.সঠিকভাবে উন্নত মানের কন্ডিশনার ব্যবহার করুন
শ্যাম্পু করার পর চুলের যত্ন অবশ্যই নেওয়া উচিত| ।যে কন্ডিশনার এ ময়েশ্চারজারের পরিমাণ বেশি থাকে সেই কন্ডিশনার চুলে ব্যবহার করুন|শ্যাম্পু করার পর অবশ্যই চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার করবেন|
চুল ভেজা অবস্থাতেই চুলে কন্ডিশনার লাগাবেন| চুলের গোড়াতে কখনোই কন্ডিশনার লাগাবেন না সব সময় চুলের আগা থেকে শুরু করে মাঝ বরাবর কন্ডিশনার লাগানোর চেষ্টা করবেন| চুলের গোড়ায় কন্ডিশনার লেগে গেলে চুলের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে|
কন্ডিশনার যেহেতু চুলকে ময়শ্চার করে উজ্জ্বল করে তোলে তাই অবশ্যই শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনার চুলে লাগাবেন|
#৫. নিয়মিত কন্ডিশনার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন
যেদিন শ্যাম্পু করবেন না, সেদিন কোনোভাবেই চুলে কন্ডিশনার লাগাবেন না| চুল বেশি ময়েশ্চার হয়ে গেলে চুল ভঙ্গুর হয়ে যেতে পারে অথবা চুলের ঝলমলে কোমল ভাব চলে যেতে পারে তাই যেদিন শ্যাম্পু করবেন তারপর কন্ডিশনার চুলে ব্যবহার করুন|
#৬. ছয়-মাস অন্তর প্রোডাক্ট পরিবর্তন করুন
একই প্রোডাক্ট চুলে বহুদিন ধরে ব্যবহার করার ফলে চুলের কোয়ালিটি নষ্ট হয়ে যায়। ফলে একই কোম্পানি ছয় মাস অন্তর পরিবর্তন করুন। এর ফলে চুলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম হবে|
বিশেষত একই কোম্পানির প্রোডাক্ট কিংবা অন্য কোম্পানির প্রোডাক্ট দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করলে ত্বক কিংবা চুল দুটোরই কোন পরিবর্তন হবে না তাই জন্য আমাদের উচিত কিছুদিন অন্তর প্রোডাক্ট পরিবর্তন করা।
#৭. চুলে অতিরিক্ত হিট দেওয়া থেকে বিরত থাকুন
চুলে অতিরিক্ত হিট দেওয়ার চুল ভঙ্গুর হয়ে যেতে পারে। তাই জন্য অতিরিক্ত চুলে হিট দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। এর থেকে ভালো ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুলের যত্ন নেওয়া।
অতিরিক্ত হিটের কারণে চুল জ্বলে যেতেও পারে তাই ব্লোয়ার, আয়রন অথবা চুল স্ট্রেটনার যদি ব্যবহার করতেই হয় তাহলে সাবধানতার সাথে তা করা উচিত।
#৮. নরম তোয়ালে ব্যবহার করুন
অনেকেই চুলকে মোছার সময় খুব চাপ প্রয়োগ করে চুল মুছে থাকে। এতে বারবার ঘর্ষণের ফলে চুল তার সুস্থতা হারিয়ে ফেলে গোড়া থেকে ভেঙে যাওয়ার আশংকায় থাকে।
সর্বদা চুল আলতো ভাবে মুছে নেবেন এতে চুলের কম ক্ষতি হয় চুল মসৃণ নমনীয় থাকে।
#৯. চুলের গোড়া টাইট করে বিনুনি করবেন না
রাত্রে ঘুমোনোর আগে অবশ্যই গার্ডার কিংবা ফিতে দিয়ে চুল বেঁধে ঘুমাবেন। চুল না বেঁধে ঘুমলে ভঙ্গুর হয়ে যেতে পারে।
কখনোই চুলের গোড়া টাইট বা টেনে বাঁধবেন না এতে চুলের গোড়া আলগা হয়ে যায় এবং চুল উঠে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কোন কোন সময় চুলের ক্ষতিও হতে পারে।
অপরদিকে চুল হালকা ভাবে বেঁধে রাত্রে ঘুমলে চুলের উপকারের পাশাপাশি চুল ঘন ও লম্বা মসৃণ হয়ে যাবে।
#১০. পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বালিশের কভার ব্যবহার করুন
কটন এর কাপড় রুক্ষ হয় যা থেকে তৈরী বালিশের কভারে ঘুমালে চুল ভেঙে যাওয়া একটি দৈনন্দিন ঘটনা হয়ে যেতে পারে।
পাতলা সুতির কাপড়ের বালিশের কভার এবং বেডসিট ব্যবহার করুন ।এর ফলে আপনার ত্বক চুল দুটোই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং ভালো থাকবে।
#১১. চুলে নিয়মিত তেল দিন
জল না দিলে যেমন গাছ বেঁচে থাকতে পারে না, ঠিক তেমনি ভাবেই চুলের গোড়ায় তেল না দিলে চুল শক্তিশালী ও মজবুত হয় না, ভঙ্গুর হয়ে পড়ে|
চুলে নিয়মিত তেল ব্যবহারে শক্ত হয় চুলের গোড়া তবে তা যেন আবার অতিরিক্ত না হয়ে যায়। অতিরিক্ত তেল ব্যবহার করলে তা মুছে ফেলতে ব্যবহার করতে হবে অতিরিক্ত শ্যাম্পু যা চুলের জন্য ভালো নয়|
#১২. হট অয়েম্যাসাজ করুন
চুলে হট মেসেজ এর মত বিকল্প কোন পদ্ধতি নেই। তাই চুলকে সুন্দর মসৃণ উজ্জ্বল করে তুলতে অবশ্যই রাত্রে ঘুমোনোর আগে কিংবা স্নানের আগে চুলে হট অয়েল বা গরম তেল মেসেজ করুন|
হট অয়েল তৈরি করার জন্য যে উপকরণগুলো লাগবে তা হল-চুলের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী অলিভ অয়েল, ক্যাস্টরঅয়েল, নারকেল তেল, ভিটামিন-ই ক্যাপসুল আর মেথি সবগুলো মিশ্রণ কে একসাথে মিশিয়ে গরম করে ভালো করে চুলের গোড়াতে 15 মিনিট মাসাজ করুন|
এই মাসাজের ফলে আপনার চুলের গোড়ার রক্ত সঞ্চালন সঠিকভাবে হবে তার ফলে চুল দ্রুত বৃদ্ধি পাবে এবং চুল মসৃণ ও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে|
#১৩. চুল স্ট্রেট করা থেকে বিরত থাকুন
চুল স্ট্রেট করলে প্রথমে চুলের ক্ষতি না হলেও দিন যাওয়ার সাথে সাথে চুল ভঙ্গুর হয়ে পড়ে এবং রুক্ষ হয়ে পড়ে| যার ফলে চুল মাঝ বরাবর ভেঙে যায়|
তাই চুল স্ট্রেট করা থেকে বিরত থাকুন ঘরোয়া ভাবে চুলের যত্ন নিন তাহলেই চুল উজ্জ্বল হয়ে উঠবে|
#১৪. নরমাল জল দিয়ে চুল ধোবেন
গরম জল ব্যবহার করার ফলে চুলের জন্য ক্ষতিকর, তাই চুল পরিষ্কারের জন্য সবসময় নর্মাল জল ব্যবহার করুন।
শীতকালে অনেকে চুলে গরম জল ব্যবহার করে থাকে, গরম জল ব্যবহার না করে হালকা উষ্ণ জল ব্যবহার করতে পারেন| গরম জল হয়েছে। হেয়ার ড্যামেজের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়।
#১৫. চুলে সর্বদা চিরুনি ব্যবহার করুন
সর্বদা চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়াবেন|এতে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
নিয়ম করে দিনে ২-৩ বার চিরুনি দিয়ে চুল চুলের জন্য বেশ উপকারী অবশ্যই মনে রাখবেন ঘুমানোর আগে চুল আছড়ে গার্ডার দিয়ে বেঁধে ঘুমোবেন তাহলে চুল কখনোই ঝরে পড়বে না।
#১৬. হেয়ার প্যাক ব্যবহার করুন
চুল ভালো রাখার জন্য অবশ্যই হেয়ার প্যাক ব্যবহার করা উচিত। সপ্তাহে একবার কিংবা দু সপ্তাহে একবার এই প্যাকটি ব্যবহার করবেন এই প্যাকটি ব্যবহার করলে আপনাদের চুল মসৃণ উজ্জ্বল মজবুত হবে।
হেয়ার প্যাকটি বানানোর জন্য লাগবে-চিনি ,লেবুর রস ,পেয়ারা রস একসাথে মিশিয়ে মিশ্রণটি ভালো করে চুলের গোড়াতে ১০ মিনিট ধরে ম্যাসাজ করতে হবে।
#১৭. চুলে হেয়ার মাক্স ব্যবহার করুন
চুল ভালো রাখার জন্য ধরন বুঝে হেয়ার মাক্স ব্যবহার করুন। চুল শুষ্ক হলে সপ্তাহে একবার ও চুল তৈরি লাগতো হলে 15 দিনে একবার হেয়ার প্যাক ব্যবহার করুন|
ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুলের যত্ন নিতে বাড়িতেই বানাতে পারেন এই হেয়ার মাক্সটি| এর জন্য যে যে উপকরণ লাগবে তা হল-এক টেবিল চামচ দই ,এক টেবিল চামচ এলোভেরা জে,ল দুটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল, একটি পাকা কলা|চুলের লেন্থ অনুযায়ী উপকরণ গুলি নেবেন
#১৮. ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুলের যত্ন
কেশুকতা পাতার রস, বেদানার রস,লেবুর রস, এক চামচ নারকেল তেল একসঙ্গে মিশিয়ে এই দ্রবণটি তৈরি করুন| সপ্তাহে একদিন এই মিশ্রণটি চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করলে চুল সিল্কি ঘন কালো ও মজবুত হবে অতি সহজেই।
( এছাড়া আরো পড়ুন মাথায় টাক পড়ে যাচ্ছে? অতিরিক্ত চুল পড়া বন্ধ করার উপায় ১৫ টি )
#১৯. স্বাস্থ্যকর খাবার
আপনার স্বাস্থ্য আপনার চুলে প্রতিফলিত হয়। আপনি স্বাস্থ্যকর থাকলে, ভাল থাকবে চুল। তাই সুন্দর চুল রাখতে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া আবশ্যক।
আর তাই আপনার চুলের বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন, লোহা এবং প্রোটিন এর মত পুষ্টিকর খাবার নিয়মিত গ্রহণ করুন।
#২০. অতিরিক্ত হেয়ার প্রোডাক্ট থেকে বিরত থাকুন
চুলে অতিরিক্ত হেয়ার প্রোডাক্ট কখনই ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে চুলের বৃদ্ধি এবং সৌন্দর্য ব্যাহত হয়।
অতিরিক্ত হেয়ার প্রোডাক্ট না ব্যবহার করে বাড়িতে ব্যবহৃত করতে পারেন নানা ধরনের প্রাকৃতিক বা ভেষজ উপাদান যা চুলকে ভেতর থেকে সুন্দর ও উজ্জ্বল গড়ে তুলবে।
চুলে ঘরোয়া ভাবে যত্ন নেওয়ার জন্য কফির প্যাক কলার মাক্স ইত্যাদি আরো নানা ধরনের ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করে চুল সিল্কি মজবুত ও নমনীয় করে তুলতে পারেন অতি সহজেই।
Disclaimer: উপরোক্ত বিষয়গুলো মানতে sangbad10 কাউকে বাধ্য বা অনুরোধ করে না। নিজের বিচার বুদ্ধি সহযোগে সিদ্ধান্ত নিন। ব্যবহারিক প্রয়োগের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
4 thoughts on “ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুলের যত্ন 20 টি কার্যকরী হেয়ার কেয়ার টিপস”