১৫ই আগস্ট এই দিনটিকে আমরা স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করি কিন্তু ২৬ শে জানুয়ারি এই দিনটিতে আমাদের প্রজাতন্ত্র দিবস কেন পালিত হয়, তা আমাদের প্রশ্ন জাগতে পারে। আমাদের সংবিধান যেহেতু ২৬ শে জানুয়ারি চালু করা হয়েছিল, তাই (happy republic day India) হিসেবে পালন করি ও প্রজাতন্ত্র দিবসের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করি।
কিন্তু 2024 সালেও আমাদের অনেকের মনে এই প্রশ্ন আসে হঠাৎ 26 শে জানুয়ারি এই দিনটিতেই কেন সংবিধান চালু করা হলো। ২৬ শে জানুয়ারি এই দিনটি কি তাহলে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কোন দিন? চলুন জেনে নেওয়া যাক ২৬ শে জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসের অজানা ইতিহাস (unknown facts about republic day of india)।
প্রজাতন্ত্র দিবস কেন পালিত হয় বিস্তারিত জানুন
মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইন
২৬ শে জানুয়ারির আসল গল্পটা শুরু হয়েছিল ১৯১৯ সালে, যখন মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইন নামক একটা আইন আমাদের দেশে চালু হয়েছিল। আমরা জানি এই আইনকে ঘিরে সারা ভারতবর্ষে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল। এই আইনটিকে সংস্কার করার জন্য ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ১৯২৭ সালে সাইমন কমিশন গঠন করেছিল।
এই সাইমন কমিশনে যেহেতু একজনও ভারতীয় কেউ ছিলেন না, তাই এই কমিশন ভারতীয়দের পক্ষে মেনে নেওয়া ঠিক সম্ভবকর হয়ে ওঠেনি। এই নিয়ে সারা ভারত প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিল।
সাইমন কমিশন
সাইমন কমিশন যখন ভারতবর্ষে আছে তখন লাহোরের একটা মিছিলে লালা লাজ পত রায় গো ব্যাক সাইমন গো ব্যাক সাইমন গো ব্যাক সাইমন এই প্রতিবাদ করেছিলেন। শোনা যায় তখন তিনি এক পুলিশের লাঠি খেয়ে আহত হন ও ভারতবর্ষের ইতিহাসে একজন স্বাধীনতার সংগ্রামী একজন দেশপ্রেমী হয়ে লাহোরে প্রাণ ত্যাগ করেন লালা লালা লাজ পত রায়।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উক্তি
একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী মারা যাওয়ার পরে ভারতবর্ষে তখন প্রতিবাদের আগুন জ্বলেছিল, ঠিক সেই সময় তদানিন্তন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ভারত সম্পর্কে একটি উক্তি হলো “YOU DON’T NO HAVE CAPACITYT RIGHT YOUR OWN CONSTITUTION” (ভারতীয়রা তোমরা তোমাদের সংবিধান লেখার জন্য এখনো তৈরি হয়নি)। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে প্রতুত্তর দিয়েছিলেন মতিলাল নেহেরু।
তিনি বলেছিলেন “চুপ করুন”, “আমি আপনাদের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করছি”। সবকিছুই তো হল কিন্তু সংবিধানটা তো নিজেদের লিখতেই হবে।
নেহেরু কমিটি গঠন
এরপর কংগ্রেস মতিলাল নেহেরুকে কেন্দ্র করে একটি দল গঠন করলেন। সেই কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন জহরলাল নেহেরু সুভাষচন্দ্র বোস। সভাপতি ছিলেন মতিলাল নেহেরু। এই কমিটির নাম হল নেহেরু কমিটি।
এই নেহেরু কমিটির ১৯২৮ সালে, ভারতবর্ষের জন্য প্রথম একটা খসড়া সংবিধান দিয়েছিল যেটা ভারতবর্ষের ইতিহাসে নেহেরু রিপোর্ট নামে পরিচিত। কিন্তু এই নেহেরু রিপোর্ট কংগ্রেসরা দিয়েছিল ব্রিটিশরা এর বিরোধিতা অবশ্যই করেছিল। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশরা কখনো এই রিপোর্টকে তোয়াক্কাই করেনি।
গোষ্ঠী তৈরি হয়
আপনারা জানেন তখন ভারতবর্ষের অভ্যন্তরে কংগ্রেসের আভ্যন্তরীণ দুটো গোষ্ঠী ছিল, একটা গোষ্ঠীর মধ্যে অন্যতম ছিলেন জহরলাল নেহেরু এবং সুভাষচন্দ্র বসু ও যারা সমাজতান্ত্রিক ভাবধারায় বিশ্বাসী।
যারা ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়েছিল। অন্য দলে ছিলেন রাজেন্দ্র প্রসাদ, সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেলের মতো নেতা যারা পূর্ণ স্বাধীনতা নয়, স্বায়ত্ত শাসনের পক্ষে ছিলেন।
লাহোরে অধিবেশন
অরাজকতার মধ্যে গান্ধীজী সকলের মধ্যে মধ্যস্থতা করলেন। তখন গান্ধীজী বলেন ব্রিটিশকে আরো কিছুদিন সময় দেওয়া হোক। কিছুদিনের মধ্যে যদি ব্রিটিশরা নেহেরু রিপোর্টকে স্বীকার করে তাহলে ভালো না হলে আমরা পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য আন্দোলনে নিশ্চয়ই নামবো।
যেহেতু ইংরেজরা এক বছরের মধ্যেও নেহেরু কমিশনকে মেনে নেয়নি, তাই ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে ডিসেম্বর মাসে লাহোরে পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য অধিবেশন আয়োজন করা হয়।
তেরঙ্গা পতাকা উত্তোলন
লাহোরে কংগ্রেসের অধিবেশনে সভাপতি হলেন জহরলাল নেহেরু। সভাপতি হওয়ার পর তিনি ভাষণ দিয়েছিলেন পূর্ণ স্বাধীনতা আজকে আমাদের লক্ষ্য। একত্রিশে ডিসেম্বর বেশ কয়েকজন মিলে লাহোরের , রাবি নদীর তীরে পতাকা উত্তোলন করলেন।
কিন্তু সেই দিন অনেকে উপস্থিত না থাকায় পরেরবার দিল্লিতে আবার ১৯৩০ সালে তেরঙ্গা পতাকা সবার উপস্থিতিতে উত্তোলন করা হয় দিনটা ঠিক করা হয়েছিল জানুয়ারি মাসের শেষ যে রবিবার ঘটনাবশত এই দিনটা পড়েছিল 26 শে জানুয়ারি ।
তারপর ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা পাওয়ার আগে প্রজন্ত ২৬ শে জানুয়ারি এই দিনটি পূর্ণ স্বরাজ দিবস হিসাবেই পালন করা হয়ে এসেছে ।
ব্রিটিশদের ক্ষমতা হস্তান্তর
তারপরে তোমরা জানো বহু প্রতীক্ষিত ১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট সেই দিনটি এলো, যেদিন ব্রিটিশরা ভারতের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করলো । তখন যেহেতু 15 ই আগস্ট এই দিনটি ঠিক করার অধিকার ভারতীয়দের ছিল না তাই ব্রিটিশরাই ঠিক করেছিল ১৫ ই আগস্ট ।
এই দিনটি ঠিক করার পেছনে ব্রিটিশদের একটা উপনিবেশিক দম্ভ কাজ করেছিল। তার কারণ ১৯৪৫ সালের ১৫ ই আগস্ট জাপান ব্রিটিশদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য । তাই এই ১৫ই আগস্ট ছিল দ্বিতীয় আত্মসমর্পণের বর্ষপূর্তি । স্বাধীনতা পেলাম ঠিকই কিন্তু ব্রিটিশরা চলে যাওয়ার আগেও তাদের উপনিবেশিক দম্ভ দেখিয়ে গেল।
আরও জানুন
আজও ২০২৪ সালে কি নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু বেঁচে আছেন? জেনে নিন
পড়া তাড়াতাড়ি মুখস্থ করার উপায়-পড়া মনে রাখার গোপন রহস্য জেনে নিন
প্রজাতন্ত্র দিবস কেন 26 শে জানুয়ারি হলো
যেহেতু ২৬ শে জানুয়ারি এই দিনটিকে ১৭ বছর ধরে আমরা পূর্ণ স্বরাজ দিবস হিসেবে পালন করে এসেছি,তাই এই দিনটিকেই কিভাবে বাঁচিয়ে রাখা যায়, কি করে স্বতন্ত্র রাখা যায় এই দিনটিকেও আমরা উদযাপন করব । তাই ভারতীয় নেত্রী বর্গ ১৯৪৯ সালের ২৬ শে ডিসেম্বর সংবিধান তৈরি সম্পূর্ণ হওয়া সত্বেও ২৬ শে জানুয়ারি এই দিনটাকে ঐতিহাসিক ভাবে মনে রাখার জন্য এই দিনটিতে সংবিধান কার্য করার সিদ্ধান্ত নেয়।
ফলে প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে পালন করি ২৬ শে জানুয়ারি। এই দিনটি অর্থাৎ ২৬শে জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে ঘোষিত হয় অর্থাৎ স্বাধীনতার আগে ভারতীয়রা যে দিনটিতে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করতো পরবর্তীকালে এই দিনটিকে গুরুত্ব দিতে প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে ঘোষণা করে আমাদের কাছে স্মরণীয় করা হয়।
6 thoughts on “জানলে অবাক হবেন ২৬ শে জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবস কেন পালিত হয়”