নিরামিষ দই পটল রেসিপি- আমার ঠাকুমার হাতের প্রিয় রান্না

নিরামিষ দই পটল রেসিপি খুবই সুস্বাদু ও সুবিখ্যাত একটি রেসিপি। বাঙালি পরিবারে সপ্তাহে অন্তত একদিন নিরামিষ রান্না হয়। এই দিনগুলিতে সত্যিই মা-ঠাকুমাদের এটা নিয়ে মাথার উপর যেন একটি বিরাট চাপ থাকে যে আজ বাড়িতে কি রান্না হবে? সেই চাপ কমাতে আজকে নিয়ে এসেছি নিরামিষ দই পটল রেসিপি (niramish doi potol recipe)। খুব সহজে দ্রুত এই সুস্বাদু দহি পটল রেসিপি টি আপনারা নিজেরাই বানিয়ে ফেলতে পারবেন।

দই পটল হলো একটি দারুন সুস্বাদু বাঙালি তরকারি। দই এবং বিভিন্ন ধরনের গুড়ো ও বাটা মসলা সহযোগে খুব সহজে নিরামিষ দই পটল রেসিপি রান্না করা হয়। বাঙালি পরিবার গুলিতে এই সুস্বাদু নিরামিষ দই পটল রেসিপি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। অর্থাৎ দৈ পটল রেসিপি নিরামিষ বাঙালি খাবারের একটি স্বাস্থ্যকর ও জনপ্রিয় খাবার। চলুন তাহলে দেখে নিন কিভাবে বানাবেন নিরামিষ দই পটল রেসিপিটি।

আপনি যে অংশ পড়তে চান, নিন্মে সেই অংশে ক্লিক করুন

পটলের বিভিন্ন রকমের মেনু

পটল দিয়ে বানানো যায় এমন একটি জনপ্রিয় রেসিপি দই পটল হলেও অনেকেই পটল ভাজা ,পটলের তোরমা , মৌরি পটল রেসিপি কিংবা চিংড়ি পটল ইত্যাদি রেসিপি গুলো খেতেও বেশ ভালোবাসেন। কিন্তু আজকের এই দৈ পটল রেসিপি নিরামিষ একবার বাড়িতে তৈরি করুন তাহলে বাকি সব পটলের রেসিপি থেকে এই রেসিপিটি আপনাদের পছন্দের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে ।

দৈনন্দিন জীবনে রান্না করা ছাড়াও কোন পুজো পার্বণের দিন প্রসাদ হিসেবেও রান্না করতে পারেন এই দই পটল রেসিপি। তাছাড়া খুব সহজে এবং তাড়াতাড়ি রান্না করা যায় দই পটল রেসিপিটি। ভাত রুটি মুড়ি পরোটা সবকিছু সাথেই পটলের এই পদটি খাওয়া যায়।

দই পটল রেসিপিটি কেন খাবেন?

দুই পটল যেমন সুস্বাদু তেমনি এর উপকারিতাও রয়েছে অনেক—

১. ডায়াবেটিস ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে

পটলের মধ্যে থাকা ফাইবার ডায়াবেটিস ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

২. প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও কোলেস্টেরল কমায়

পটলে থাকা ভিটামিন এ ,বি , সি ,পটাশিয়াম , ম্যাগনেসিয়াম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও কোলেস্টেরল কমায়। দৈ পটল রেসিপি নিরামিষ খুবই স্বাস্থ্যকর একটি খাবার।

৩. ত্বককে ভালো রাখে এবং ত্বকের বার্ধক্য জনিত সমস্যা দূর করে

মৌরি পটল রেসিপি মুখরোচক একটি খাবার যা যে কোন অনুষ্ঠান বাড়িতে রান্না হলে বেশ ভালই লাগে। পটলে থাকা ভিটামিন এ ও সি ত্বককে ভালো রাখে এবং ত্বকের বার্ধক্য জনিত সমস্যা দূর করে ও সতেজ রাখে।

৪. হজম শক্তি বাড়ায়

টক দই এর পুষ্টিগুণ এর কোন কথাই নেই। দইতে থাকা প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও হজম শক্তি বাড়ায়। নিরামিষ দই পটল রেসিপি হলে যে কোন পুজোর দিন বেশ জমে যায়।

৫. দহি পটল রেসিপি হার্ট অ্যাটাক

টক দইতে থাকা ভিটামিন সি ও এ কোলেস্টেরল উচ্চ রক্তচাপ ও হার্ট অ্যাটাক এর সম্ভাবনা কমিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখে। দহি পটল রেসিপি টি পরিবারের যে কোন মানুষকে খাওয়ালে আপনি প্রশংসা পাবেন।

অর্থাৎ দই পটল রেসিপিটি একদিকে সুস্বাদু অন্যদিকে আমাদের শরীরের জন্য খুবই স্বাস্থ্যকর একটি রেসিপি। তাই দেরি না করেই চলুন জেনে নিন কিভাবে নিরামিষ দই পটল রেসিপি বানাবেন–

দই পটল রেসিপি উপকরণ

দই পটল রেসিপি উপকরণ :

১. পটলে মেশানোর জন্য :

১. ৩০০ গ্রাম বড় সাইজের পটল।

২. ১০০ গ্রাম টক দই।

৩. ১/২ চামচ হলুদ গুঁড়ো।

৪. ১ চামচ কাশ্মীরি লঙ্কার গুঁড়ো।

৫. ১ চামচ ঝাল লঙ্কার গুঁড়ো।

২. ফোড়নের জন্য:

৬. ১ চামচ ধনে গুঁড়ো।

৭. ১ চা চামচ জিরে গুঁড়ো।

৮. ২ টো ছোট এলাচ।

৯. ২ টি দারুচিনি টুকরো।

১০. ২ টি লবঙ্গ।

১১. ২ টি তেজপাতা।

৩. দইতে মেশানোর জন্য:

১২. ২৫ গ্রাম চালমগজ।

১৩. ২৫ গ্রাম কাজুবাদাম।

১৪. ২ টি কাঁচা লঙ্কা।

১৫. ১ চামচ পোস্ত বাটা।

১৬. ১ চা চামচ চিনি।

১৭. একটি টমেটো।

১৮. ১ টেবিল চামচ সরিষার তেল।

১৯. সাদ অনুযায়ী নুন।

৪. অন্যান্য দরকারি সামগ্রী:

২০. জল।

২১. ঘি।

নিরামিষ দই পটল রন্ধন প্রণালী:

এবার নিরামিষ দই পটল বানানোর রেসিপি ধাপে ধাপে জেনে নেবো—

প্রথম ধাপ

দৈ পটল রেসিপি নিরামিষ তৈরি করতে প্রথমেই পটলগুলো ঝুড়িতে করে নিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। ধুয়ে রাখা পটলের খোশাগুলো ছাড়িয়ে নিতে হবে।

দ্বিতীয় ধাপ

তারপরে আড়াআড়িভাবে পটলগুলো একটু করে চিরে নিতে হবে| তাহলে নিরামিষ দই পটল রেসিপি খেতে সুস্বাদু হবে। কেটে রাখা পটল গুলির মধ্যে অল্প পরিমাণ নুন আর হলুদ দিয়ে ভালো করে মাখিয়ে নিতে হবে।

তৃতীয় ধাপ

একটি বাটিতে জিরে গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো, আর অল্প পরিমাণ জল নিয়ে সিলে কিংবা মেক্সিতে ভালো করে মসলার পেস্ট বানিয়ে তৈরি করে নিন।

চতুর্থ ধাপ

মিক্সিতে কাজু বাদাম, চালমগজ, পোস্ত , কাঁচালঙ্কা আর সামান্য পরিমাণ জল নিয়ে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন। তারপর একটা সুন্দর পেস্ট তৈরি করে নিন।

পঞ্চম ধাপ

একটি পার্টিতে টক দই এর মধ্যে স্বাদমতো নুন, স্বাদমতো জিরে গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো নিয়ে একটা চামচ দিয়ে ভালো করে সবগুলো উপাদানকে মাখিয়ে নিন। তাহলে দই পটল রেসিপি দেখতে দারুন সুন্দর হবে।

ষষ্ঠ ধাপ

গ্যাসে কড়াই বসিয়ে সরষের তেল দিন তেল গরম হয়ে এলে পটল গুলো লাল লাল করে ভেজে রেখে তুলে নিন।

সপ্তম ধাপ

কড়াই গরম হয়ে গেলে কড়াইতে প্রয়োজন মত সরিষার তেল দিয়ে দিন। তেল গরম হয়ে এলে তেলের মধ্যে এলাচ, লবঙ্গ , দারচিনি ও পাঁচফোড়ন দিয়ে দিন।

অষ্টম ধাপ

তারপর মসলার পেস্ট ও সামান্য পরিমাণ হলুদ গুঁড়ো, টমেটো কুচি দিয়ে কিছু সময় নাড়তে থাকুন। এইভাবে কিছু সময় সবগুলো মসলা ভালো করে কষিয়ে নিন। মসলা ভালো করে কষিয়ে নিলে দৈ পটল রেসিপি নিরামিষ খেতে সুস্বাদু হবে।

নবম ধাপ

মসলা থেকে তেল ছাড়তে শুরু করলে ভেজে রাখা পটলগুলো কড়াইতে দিয়ে দিন। তারপর আরো কিছুক্ষণ কষিয়ে নিন।

দশম ধাপ

মসলা দিয়ে কষিয়ে রাখা পটলের মধ্যে স্বাদমতো নুন দিয়ে একটু ভালো করে নেড়ে চেড়ে নিন।

একাদশ ধাপ

পটল সেদ্ধ হওয়ার জন্য সামান্য পরিমাণ গরম জল দিয়ে কিছু সময় ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন।

দ্বাদশ ধাপ

কিছুক্ষণ পর ঢাকনা খুলে আগে থেকে তৈরি করে রাখা দই এবং কাজু বাদামের পেস্ট টি এর মধ্যে দিয়ে দিন।

ত্রয়োদশ ধাপ

পরিমাণমতো চিনি ছড়িয়ে দিন গ্যাস একদম হালকা করে একটু সময় রাখুন।

চতুর্দশ ধাপ

দুই থেকে তিন মিনিট ঢাকনা দিয়ে গ্যাস একদম হালকা করে বসিয়ে রাখুন। তারপর তিন মিনিট পর নামিয়ে নিন।

পঞ্চদশ ধাপ

একটি বাটিতে দই পটল রেসিপি টি তুলে নিন তারপর এক চামচ ঘি উপর থেকে দিয়ে দিন। তাহলে দই পটল রেসিপি খেতে ও দেখতে আরো সুন্দর লাগবে।

কিসের সাথে খেতে পারবেন দই পটল রেসিপিটি?

খুব সহজে বাড়িতেই তৈরি হয়ে গেল নিরামিষ দই পটল রেসিপি। ভাত, রুটি, মুড়ি, পরোটা সবকিছু দিয়েই গরম গরম এই দুর্দান্ত স্বাদের স্বাস্থ্যকর নিরামিষ দই পটল রেসিপি আপনারা খেতে পারবেন। বাড়ির লোককে এই দহি পটল রেসিপি নিরামিষ খাওয়ালে অবশ্যই আপনার সুনাম করবে সবাই।

আরো জানুন: খিচুড়ি রান্নার রেসিপি

দারুন সুস্বাদু পালং শাকের রেসিপি। ডিম পালং কষা

আলু পরোটা রেসিপি বাংলা- alu porota recipe

নিরামিষ দই পটল রান্না কি খুব কঠিন?

নিরামিষ দই পটল রান্না করা খুব কঠিন নয়। যদি আমাদের এই রেসিপিটা অনুসরণ করেন তাহলে অতি সহজেই নিরামিষ দই পটল রান্না করতে পারবেন।

শেয়ার করুন:
Titli Ray

আমি Titli Ray,,আমি ২০১৭ সাল থেকে লেখালেখির সঙ্গে এবং ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে জড়িত ও ভিডিও তৈরি করি। আমি আপনাদেরকে আমার অভিজ্ঞতা ও তথ্য শেয়ার করব। ধন্যবাদ।

3 thoughts on “নিরামিষ দই পটল রেসিপি- আমার ঠাকুমার হাতের প্রিয় রান্না”

Leave a comment