আজও ২০২৪ সালে কি নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু বেঁচে আছেন? জেনে নিন

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা সর্বধিনায়ক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আজও বেঁচে আছেন কিনা এটা একটি বিতর্কিত প্রশ্ন যাইহোক এই প্রশ্নের উওর যুক্তিসহ তথ্য ও প্রমান দেয়ার চেষ্টা আজ আমি করব। তার আগে জেনে নেওয়া যাক ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর (netaji subhas chandra bose) কি ভূমিকা রয়েছে?

Netaji এর জীবনীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট

সুভাষ চন্দ্রের প্রথম জীবন

১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩ শে জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গ বিভাগের উড়িষ্যার কটক শহরে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু জন্ম গ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে তিনি কলকাতায় চলে আসেন সেখানেই তার বেড়ে ওঠা। মাধ্যমিক পরীক্ষায়/ম্যাট্রিক পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার লাভ করে তিনি পরবর্তীকালে দর্শন নিয়ে বি.এ ও সাইকোলজি নিয়ে এমএ পাস করেন।

ছোটবেলা থেকেই তার মধ্যে জন্মে অফুরন্ত দেশ-প্রেম। সেই কারণেই নিজের ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও পরিবারের ইচ্ছায় তিনি আইসিএস পরীক্ষা দেন এবং সেই কঠিন চাকরির পরীক্ষায় ইংরেজদের সাথে পাল্লা দিয়ে চতুর্থ স্থান অধিকার করে।

এই অভূতপূর্ব সাফল্য সত্ত্বেও তিনি এই লোভনীয় সুখের চাকরি গ্রহণ করেননি। পূর্বেই বলেছি তিনি পরীক্ষা দিয়েছিলেন তার পরিবারের ইচ্ছায় পরিবারের কথা তিনি মানলেন।এবার তিনি মনস্থির করলেন দেশের সেবা করবেন।

ভারতের পরিস্থিতি ও রাজনীতিতে যোগদান

এই সময় ভারতবর্ষে কয়েকটি ঘটনা ঘটে যেমন জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, রাওলাট আইন চালু ইত্যাদি। ইংরেজদের অত্যাচার চরমে পৌঁছায়। ভারতবর্ষ ও ভারতবাসী যখন এই সমস্যায় জর্জরিত সেই সন্ধিক্ষণে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে গান্ধীজীর কাছে পৌঁছান।

গান্ধীজি সুভাষচন্দ্র বসুকে বাংলার প্রাদেশিক জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি চিত্তরঞ্জন দাসের সঙ্গে দেখা করতে বলেন, চিত্তরঞ্জন দাসের সঙ্গে নেতাজি সুভাষচন্দ্রর দেখা হলে পরবর্তীকালে অসহযোগ আন্দোলনে যুবকদের সংগঠিত করার দায়িত্ব দেন এবং সুভাষচন্দ্র সাফল্যের সঙ্গে সেই দায়িত্ব পালন করেন।

জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে নেতাজীর কর্মকাণ্ড

পরবর্তীকালে কেটে যায় কিছু বছর। জাতীয় কংগ্রেসের অন্যতম সদস্য হিসাবে তিনি কাজ চালিয়ে যান। কিন্তু জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে তরুণ সমাজতান্ত্রিক ভাবধারায় দীক্ষিত তরুণ দুই নেতা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ও নেহেরু তারা চেয়েছিল ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা।

কিন্তু বিংশ শতকের দ্বিতীয় দশকে গান্ধীজী তখনো মনে করতেন পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন বাড়াবাড়ি তাই স্বায়ত্তশাসনের অধিকার অধিকারী লক্ষ্য হওয়া উচিত। তাও আবার অহিংস পথে শান্তিপূর্ণভাবে।

কংগ্রেসের পূর্ণ স্বাধীনতা ঘোষণা

1929 খ্রিস্টাব্দের কংগ্রেসের বার্ষিক লাহোর অধিবেশনে গান্ধীজীর অনুপস্থিতিতে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ও জহরলাল নেহেরু এই দুই তরুণ নেতার উদ্যোগে ও জহরলাল নেহেরুর সভাপতিতে কংগ্রেসের উদ্দেশ্য হিসেবে ঘোষণা করে পূর্ণ স্বাধীনতা এবং জানুয়ারি অর্থাৎ ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ছাব্বিশে জানুয়ারি থেকে লিখিতভাবে ভারতের স্বাধীনতা দিবস হিসেবে ভারতবর্ষ পালন করতে থাকে।

যদিও গান্ধীজি এই পূর্ণ স্বাধীনতার ঘোষণাটিকে মনে প্রাণে মেনে নিতে পারেনি। যাইহোক পরবর্তীকালে চলে আইন অমান্য আন্দোলন এবং সুভাষচন্দ্র বসু এ সময় জাতীয় কংগ্রেসের অন্যতম নেতায় পরিণত হয়। তিনি বাংলার কলকাতা কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন এবং যথেষ্ট গঠনমূলক কাজ করেন।

কংগ্রেসের সভাপতি পদে সুভাষচন্দ্র বসু

১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে হরিপুরা কংগ্রেসে অধিবেশনে সুভাষচন্দ্র বসুকে জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নিযুক্ত করা হয় এবং তিনি অনেক গঠনমূলক কাজের মধ্যে দিয়ে ভারতীয়দের কল্যাণের চেষ্টা করেন। যদিও এই সময় গান্ধীজী এবং সুভাষ চন্দ্রের মতের মধ্যে কিছু পার্থক্য সকলের সামনে উপস্থিত হয়।

ফলতো গান্ধীজী ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি হিসেবে সুভাষচন্দ্র বসুকে মেনে নিতে অস্বীকার করে কিন্তু সুভাষচন্দ্র বসু উপলব্ধি করে দেশ দেশের বৃহত্তম জনগণ ও নেত্রী বর্গ জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি হিসাবে তাকেই চায়।

তাই ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ও ভারতের স্বাধীনতার বিষয়টিকে লক্ষ্য রেখে তিনি নিজেকে জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি হতে পুনরায় রাজি হয়ে যায়। কিন্তু গান্ধীজি যেহেতু তাঁর সভাপতি হতে কোনমতেই মেনে নিতে চাইনি। তাই এই ক্ষেত্রে গান্ধীজী ভোটাভোটির ব্যবস্থা করে।

হরিপুরা কংগ্রেস

১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ত্রিপুরী কংগ্রেসের অধিবেশনেএই ভোটে নেতাজি সুভাষচন্দ্রের বিপক্ষে গান্ধীজী জহরলাল নেহেরুকে দাঁড়াতে বললে জহরলাল নেহেরু তা অস্বীকার করে এরপর গান্ধীজী বল্লভ ভাইকে বললেও তিনিও রাজি হননি।

অবশেষে গান্ধীজি পট্টোভি সীতারামাইয়াকে জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতির ভোটে দাঁড় করাতে রাজি করায়। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ভোটাভুটিতে গান্ধীজি মনোনীত পট্টোভি সীতারামাইয়াকে ব্যাপক ভোটে পরাজিত করেন।

যদিও নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু গান্ধীজী এবং তার অনুসারীদের সম্পূর্ণ অসহযোগিতার কারণে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়।

ফরওয়ার্ড ব্লক গঠন

এরপরে ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ২২ শে জুন কংগ্রেসের অভ্যন্তরে তিনি সাম্যবাদী আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ফরওয়ার্ড ব্লক নামে একটি দল গঠন করে। পরবর্তীকালে কংগ্রেসের আইন বা নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগে তাকে দল থেকে তিন বছরের জন্য বহিষ্কৃত করা হয়। এই সুযোগে ইংরেজ সরকার তাকে গ্রেফতার করে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের চেষ্টা

এখানে বলে রাখা দরকার সেই সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডঙ্কা পুরো বিশ্ব জুড়ে বেজে উঠেছিল। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু উপলব্ধি করেন এই সময় যদি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে একটা শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলা যায় তাহলে ব্রিটিশ সরকার আমাদের দেশ থেকে পালাতে বাধ্য।

কিন্তু গান্ধীজিকে বারবার অনুরোধ করেও নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু এই বিষয়টিকে বোঝাতে পারেননি। ফলে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে নেতাজি নেমে পড়েন।আন্দোলন সংগঠিত করার উদ্দেশ্যে তিনি বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তৈরি করা হলওয়ের মনুমেন্টকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করতে থাকেন।

সুভাষ চন্দ্রের গৃহবন্দী

যদিও আন্দোলন বৃহত্তর ভাবে সংগঠিত করতে পারার আগেই তাকে ইংরেজ সরকার গ্রেফতার করে। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু উপলব্ধি করেন দেশ থেকে আর আন্দোলন করে এই অত্যাচারী ব্রিটিশ সরকারকে তাড়ানো সম্ভব নয়।

তাই তিনি বিদেশি শক্তির সহযোগিতায় ভারত থেকে ইংরেজদেরকে সরানোর জন্য মনস্থির করেন এবং পথ তৈরি করতে থাকেন। জেলে বন্দীকালীন অবস্থায় তিনি অনশন করেন। তার শরীরের অবনতি দেখে তাকে মুক্ত করা হয় যদিও তাকে গৃহে নজরদারির ব্যবস্থা করে গৃহবন্দী করা হয়েছিল।

নেতাজির গৃহত্যাগ

এবার তার গৃহবন্দি অবস্থায় থাকাকালীন তিনি প্লান করেন তিনি ভারত ত্যাগ করবেন এবং বিদেশে শক্তির সহায়তা লাভ করে ব্রিটিশদের ভারত থেকে উৎখাত করবেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি তার ভাইপোর সহায়তায় গৃহত্যাগ করতে সক্ষম হয় এবং আফগানিস্তান ও সোভিয়েত ইউনিয়ন হয়ে জার্মানিতে চলে যান।

নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু ছবি
নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু ছবি

আজাদ হিন্দ ফৌজের দায়িত্বভার গ্রহণ

সেখানে হিটলারের সঙ্গে দেখা করেন কিন্তু হিটলার তাকে জার্মানির স্বার্থে ব্যবহার করতে চাইলে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু উপলব্ধি করতে পারেন এখানে থেকে হিটলারের সাহায্য সে পাবে না।

পরবর্তীকালে সে রাসবিহারী বসুর ডাকে জাপানে যান এবং সেখানে আজাদ হিন্দ ফৌজের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং আজাদ হিন্দ ফৌজকে অনেক বড় করে তোলেন। বিদেশে বসবাসকারী ভারতীয়দের সাহায্যে তিনি আজাদ হিন্দ বাহিনীর অর্থভাণ্ডার গড়ে তোলেন।

আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ (শহীদ ও স্বরাজ)

জাপানের প্রধানমন্ত্রী তোজো আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর হাতে তুলে দেন। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু এই স্থানে প্রতিষ্ঠা করেন ভারতের আজাদ হিন্দ সরকার এবং নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আজাদ হিন্দ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হন। বিশ্বের প্রায় নয়টি দেশ এই সরকারকে মর্যাদা দেয় ও মেনে নেয়। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের নাম রাখেন শহীদ ও স্বরাজ।

নেতাজি ও আজাদ হিন্দ বাহিনীর ভারত অভিযান

এরপর চলে নেতাজীর ভারত অভিযান। তিনি পূর্ব ভারতের মধ্য দিয়ে দিল্লি দখলের সিদ্ধান্ত নেয়। তিনি দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন তোমরা আমাকে রক্ত দাও আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব। দিল্লি চলো তার হয় স্লোগান। এরপর মায়ানমারের মধ্য দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে।

আজাদ হিন্দ বাহিনীর সঙ্গে জাপানি সেনা ভারতীয় ভূখণ্ডে মনিপুরের মৈরাং শহরে প্রথম ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অনুকরণে তৈরি ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা উত্তোলন করা হয় অর্থাৎ ভারতের মাটিতে ভারতের পতাকা প্রথম উত্তোলন করা হলো। পরবর্তীকালে ইম্ফল ও কোহিমাতেও ভারতের পতাকা উত্তোলন হয়।

আজাদ হিন্দ ফৌজের ওপর ব্রিটিশ ও আমেরিকার যৌথ আক্রমণ আক্রমণ

আজাদ হিন্দ ফৌজের এই অভূতপূর্ব সাফল্য জনগণের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি করে কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এই সময় আমেরিকা মিত্রশক্তিপক্ষে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগদান করে। ব্যাপক অস্ত্র ভান্ডার নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে আমেরিকা অক্ষশক্তির ওপর। অক্ষশক্তির অন্যতম শক্তি ছিল জাপান।

জাপানের সঙ্গে পূর্ব শত্রুতাবসত জাপানের ওপর আক্রমণ হানে আমেরিকা। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আমেরিকা উড়োজাহাজ দিয়ে আক্রমণ করে। অন্যদিকে ভারতে আক্রমণরত জাপানিদের শায়েস্তা করতে আমেরিকার শত শত যুদ্ধজাহাজ পূর্ব ভারতে ব্রিটিশদের সহায়তা করতে উপস্থিত হয়।

এরফলে জাপানিরা প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিজেদের দেশকে রক্ষার্থে সমস্ত যুদ্ধজাহাজ ও সেনা ফিরিয়ে নিয়ে চলে যায়। ফলতো আজাদ হিন্দ ফৌজ উড়োজাহাজবিহীন, শক্তিশালী যুদ্ধ অস্ত্র বিহীন আর বেশি দিন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারিনি।

আজাদ হিন্দ ফৌজের আত্মসমর্পণ

এরপর আজাদ হিন্দ ফৌজ আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। প্রায় ২৫ হাজার আজাদ হিন্দ ফৌজের সেনা ব্রিটিশ সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করে। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আত্মসমর্পণ করতে ইচ্ছা প্রকাশ করলে তার সহযোগীদের পরামর্শে তিনি আত্মসমর্পণ থেকে বিরত থাকে।

তিনি উপলব্ধি করেন পরবর্তীকালে আরো বৃহত্তর আন্দোলন বা বৃহত্তর আক্রমণ ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে করতে গেলে তাকে তাকে আত্মসমর্পণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

নেতাজির বিতর্কিত মৃত্যু সংবাদ

এরই মাঝে ঘটে এক বিতর্কিত ঘটনা খবর ছড়িয়ে পড়ে, ১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্ট এক বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজি সুভাষচন্দ্রর মৃত্যু হয়েছে। যদিও এই ঘটনাটি ভারত তথা বিশ্বের মানুষের কাছে একটি অমীমাংসিত ঘটনা।

ঘটনাটির সত্যতা নিয়ে অনেক রিসার্চ করা হয়েছে, এমনকি অনেক কমিশনও তদন্ত করেছে কিন্তু নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু কি সত্যিই মারা গেছেন? না কি তিনি এই ঘটনার পরেও জীবিত ছিলেন বা আছেন- এটা এখনো সবার কাছে অজানা। কারণ-

  1. কারণ জানা যায় যে বিমান দুর্ঘটনার কথা বলা হয়েছে যাতে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যু হয়েছে সে বিমান দুর্ঘটনা আসলে হয়নি।
  2. আবার একটি তথ্য সামনে উঠে দাঁড়ায় যে বিমান দুর্ঘটনার কথা বলা হয়েছে তাতে 10-11 জন ব্যক্তি ছিল। কিন্তু ওই বিমানটিতে আদতে দুজনের বেশি চড়া যেত না তাহলে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু মৃত্যুর ঘটনা ও কিন্তু সত্য বলে এখানে প্রমাণিত হয় না। কারণ ওই বিমান বাহিনীতে বিমানচলকসহ বেশ কয়েকজন জাপানি সেনা উপস্থিতির কথা বলা হয়।
  3. এছাড়া জাপানিদের কাছে থেকে বিতর্কিত অনেক রকম তথ্য উঠে আসে। আবার এরকম একটি তথ্য উঠে আসে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বিমান দুর্ঘটনার সময় মারা না গেলেও পরবর্তীকালে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে মারা যান এবং তার দেহ ওই দেশেই ভস্মিভূত করে রাখা হয়।
  4. যাই হোক নেতাজীর মৃত্যু একটি বিতর্কিত বিষয় কারণ ভারত স্বাধীনতা হওয়ার পরেও নাকি নেতাজীকে অনেকেই দেখেছেন। আবার অনেকেই গুমনামী বাবা নামে একজন ব্যক্তি তাকেও নেতাজির সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়ার অনেক কারণ লোকের সামনে উঠে এসেছে।

নেতাজির ভয় ও মৃত্যু নিয়ে চক্রান্ত

যদিও নেতাজির মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে চলেছে অনেক রাজনীতি ও চক্রান্ত কারণ বিভিন্ন সময়ে রাশিয়া, জাপান নিজেদের স্বার্থে নেতাজির মৃত্যুর ঘটনাটাকে নানান ভাবে দেখানোর চেষ্টা করেছে। ব্রিটিশ সরকার, আমেরিকা সরকার নেতাজিকে খুঁজে বেরিয়েছেন নেতাজীর মৃত্যু ঘটনা ছড়ানোর বহু পরেও অর্থাৎ ভারতের স্বাধীনতার বহুদিন পর পর্যন্ত । কারণ এইসব পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলির কাছে সাম্যবাদী ভাবাদর্শী নেতাজি সুভাষচন্দ্র ছিল ভয়ের কারণ।

ভারতের স্বাধীনতা পাওয়ার ক্ষেত্রে নেতাজির অবদান

যাইহোক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এইসব পুঁজিবাদী রাষ্ট্র অর্থাৎ মিত্র শক্তির কাছে কতটাই ভয়ংকর ছিল বা ভয়ের কারণ ছিল তা তাদের এই কার্যকলাপ থেকে স্পষ্ট লক্ষ্য করা যায়। যাই হোক নেতাজীর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে যতই বিতর্ক থাক।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতাজির অবদানের গুরুত্বের বিষয় নিয়ে কোন বিতর্ক আমাদের কাছে নেই। কারন ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ভারতছাড়ো আন্দোলনের পর আর কোনো বৃহত্তর আন্দোলন গান্ধীজীর নেতৃত্বে ভারতে হয়নি কিন্তু তার বহুবছর পর অর্থাৎ ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট কেন কোন আন্দোলন ছাড়াই ভারত থেকে ব্রিটিশরা চলে গেল? এই প্রশ্নের উত্তরের মধ্যেই নেতাজির অবদান ফুটে ওঠে।

সুভাষ চন্দ্রের অবদান বিষয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য

ভারতের স্বাধীনতার সময় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ক্লিমেন্ট এটলি। তাকে ভারতের স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে যখন জিজ্ঞাসা করা হয় আপনারা কেন ভারত ত্যাগ করেছিলেন এবং ভারত ত্যাগের জন্য বা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ক্ষেত্রে নেতাজি নাকি গান্ধিজি কে বেশি দায়ী ছিল? সেক্ষেত্রে তিনি অবশ্যই আর কারো নাম নয় নেতাজির নামই উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন নেতাজি যেভাবে একটি শক্তিশালী সামরিক বাহিনী তৈরি করে ভারতের ওপর বা তা ব্রিটিশ সরকারের ওপর আক্রমণ হানে তা পরবর্তীকালে আরো বৃহত্তর হতে পারতো।

আজাদ হিন্দ ফৌজের বিচার ও নৌ বিদ্রোহ

শুধু তাই নয় নেতাজীর নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ ফৌজের অভিযানের ফলে ভারতীয় সেনা যারা ব্রিটিশদের অধীনে কাজ করতো তাদের মনে জাতীয়তাবোধ ও দেশের প্রতি অভূতপূর্ব ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। এর ফলেই আজাদ হিন্দ বাহিনীর বিচার যখন দিল্লির লালকেল্লায় হয়, তখন ভারতের নৌ বাহিনীর প্রায় ২০ হাজার সেনা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুরু হয় নৌ বিদ্রোহ।

এই বিদ্রোহে নৌ সেনারা ব্রিটিশদের ঘাড় ধরে তাদেরকে বলতে বাধ্য করে “জয় হিন্দ” ধ্বনি। যতক্ষণ না ব্রিটিশ কর্মচারী জয় হিন্দ বলতো ততক্ষণ তাকে ছাড়া হত না। নৌবাহিনীর সেনারা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ছবি মাথায় করে বিদ্রোহ করতে থাকে এবং ব্রিটিশ সরকার গোপন সূত্রে খবর পায় যে কোন মুহূর্তে ভারতীয় সেনাবাহিনী ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করতে পারে।

শুধু তাই নয় আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেনাদের বিচার চললে এই বিচারের বিরুদ্ধে ভারতের বিভিন্ন স্থানে শুরু হয় আন্দোলন। বিশেষ করে কলকাতায় চলে ব্যাপক আন্দোলন। পালন করা হয় রশিদ আলী দিবস। রশিদ আলী ছিলেন আজাদ হিন্দ ফৌজের অন্যতম ক্যাপ্টেন।

কেন ভারত ত্যাগ করল ইংরেজরা বা ব্রিটিশ সরকার?

যদিও ইংরেজদের ভারত ত্যাগের পিছনে আন্তর্জাতিক কিছু পরিস্থিতিও দায়ী ছিল কিন্তু ভারতবর্ষে যে পরিস্থিতি আজাদ হিন্দ ফৌজ বা তার সেনা ও নেতাজি তৈরি করেছিল (উপরের আলোচিত হয়েছে) তাতে ভারতীয় জনগণ, ভারতের সেনা, ভারতের নৌসেনা সবার মধ্যে ব্রিটিশ বিরোধী মানসিকতার তৈরি হয়।

যার ফলে ব্রিটিশরা উপলব্ধি করে আর ভারতে থাকা তাদের দ্বারা সম্ভব নয়। কারণ এরপর ভারতে থাকলে ভারত থেকে হয়তো তাদেরকে ধার ধাক্কা দিয়ে ও লাথি মেরে তাড়ানো হবে। এই ভয়েই তারা অর্থাৎ ব্রিটিশ সরকার ভারত ত্যাগে বাধ্য হয়।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বেঁচে আছেন

আলোচনার শুরুতেই যেই বিষয় নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল অর্থাৎ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আজও কি আমাদের মাঝে জীবিত আছেন কিনা? নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু হয়তো আমাদের মাঝে সশরীরে আজকে নেই কিন্তু ভারতীয় স্বাধীনতার জন্য তার অপরিসীম অবদান আমাদের মাঝে রয়েছে।

যেভাবে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে নিজের ভবিষ্যৎ সুখের জীবনকে উৎসর্গ করে ভারতের স্বাধীনতার জন্য দিয়েছিল তা আমরা কেউ ভুলতে পারবো না। তাই আমাদের সকল ভারতীয়র কাছে নেতাজি যে বার্তা রেখে গেছেন সেটা কখনোই ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়।

হয়তো নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু যে অখন্ড ভারতবর্ষের স্বপ্ন দেখেছিল তা আমরা পায়নি। হয়তো নেতাজি যে সাম্যবাদী রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিল সেই স্বপ্ন সম্পূর্ণরূপে সফল হয়নি কিন্তু সময় এখনো শেষ হয়ে যায়নি নেতাজির সেই অসম্পূর্ণ কাজ- বিশ্বের সিংহাসনে শীর্ষ স্থান অধিকার করবে ভারতবর্ষ, তার এই স্বপ্ন সম্পূর্ণ করার দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে।

আমাদের ছাত্র সমাজ, যুবসমাজ ও দেশবাসীকে তাই এই শপথ গ্রহণ করতে হবে, যে সেই বীর সংগ্রামী, বীর বিপ্লবী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু তার যে অসম্পূর্ণ কাজ তিনি আমাদের জন্য রেখে গেছেন তা আমরা পূরণ করবই তাহলেই নেতাজি আমাদের কাছে চিরদিন বেঁচে থাকবে ও প্রত্যেক ঘরে ঘরে নেতাজির মতো সন্তান জন্ম নেবে।

আরোও পড়ুন পড়া তাড়াতাড়ি মুখস্থ করার উপায়-পড়া মনে রাখার গোপন রহস্য জেনে নিন

আজও ২০২৪ সালে কি নেতাজিসুভাষ চন্দ্র বসু বেঁচে আছেন? জেনে নিন

Shoaib Malik Jail? জেল হলো শোয়েব মালিকের সানিয়া মির্জা কে ছেড়ে আবার বিয়ে করায়? কি বলছে আইন?

শেয়ার করুন:
Titli Ray

আমি Titli Ray,,আমি ২০১৭ সাল থেকে লেখালেখির সঙ্গে এবং ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে জড়িত ও ভিডিও তৈরি করি। আমি আপনাদেরকে আমার অভিজ্ঞতা ও তথ্য শেয়ার করব। ধন্যবাদ।