মধু হল এক প্রকারের মিষ্টি জাতীয় পদার্থ। মৌমাছি ফুলের নির্যাস থেকে মধু সংগ্রহ করে এবং সেই মধু মৌচাকে সংরক্ষণ করে রাখে। মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা (modhu-khaoar-upokarita-opokarita-in-bengali) রয়েছে বহুল অংশে। আজকে মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আজকে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে এই আর্টিকেলটিতে। আজকে আপনারা জানতে পারবেন মধু আমাদের শরীরের জন্য কতখানি উপকার এবং কতখানি ক্ষতি করে। তার জন্য পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
Table of Contents
মধু কোথায় বেশি পাওয়া যায়
প্রথমত যেসব জায়গাতে মৌমাছি বেশি কিংবা ফুলের চাষ বেশি হয় সেই সব জায়গাতেই বেশি মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে মৌচাকে সংরক্ষণ করতে পারে। যেহেতু সুন্দরবন এলাকায় বড় বড় গাছ আছে তাই সুন্দরবন এলাকাতে মৌমাছি নিজের মৌচাকে বেশি করে মধু সংগ্রহ করে রাখতে পারে। তাই আমরা জানি সুন্দরবন এলাকার অনেক মানুষই গভীর বন থেকে মধু সংগ্রহ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। এই জীবিকার ঝুঁকিপূর্ণ হলেও জীবনধারণের জন্য মানুষ এই কাজ করে থাকেন। বিশেষত গ্রামাঞ্চলের পুরুষরাই দল বেঁধে গভীর জঙ্গলে মধু সংগ্রহ করতে যান এবং সেটি পাইকারি বাজারে বিক্রি করেন তারপর প্রসেসিং করে মধু খোলা মার্কেটে বিক্রি হয়।
মধুকে সুষম জলীয় খাদ্য কেন বলা হয়?
আমরা প্রায় সবাই জানি দুধকে সুষম খাদ্য বলা হয়। কারণ একটি মানুষ যদি সারাদিনের দুধ খেয়ে থাকেন তাহলে তার দেহে সব রকম পুষ্টিগুণ পান ।
অনেক সময় মধুকেও সুষম জলীয় খাদ্যও বলা হয়। কারণ মধুতে প্রায় সব রকমের উপাদান থাকে সেগুলি হল – মধুতে থাকে এনকাইম, গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ, সুক্রোজ এবং মন্টোজ। আরও থাকে অ্যামাইনো অ্যাসিড এবং খনিজ লবণ। মধুতে কোন তেল না থাকায় এতে কোন চর্বি জাতীয় পদার্থ এবং প্রোটিন নেই।
মধু খাওয়ার নিয়ম ও উপকার
দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে
আমাদের সমাজে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ছোট বয়সেই চশমা ব্যবহার করতে। এই চশমা যাতে ব্যবহার না করে আমরা কিছুটা হলেও বেশি দিন চোখের ঠিক ভাবে দেখতে পাই অর্থাৎ দৃষ্টি শক্তি যাতে ঠিক থাকে তার জন্য আমাদের মধু সেবন করা অত্যন্ত জরুরী।
শারীরিক দুর্বলতা রোধ করে
মধু তে থাকা গ্লুকোজ ফ্রুক্টোজ আমাদের শরীরে তৎক্ষণাৎ শক্তি যোগায় ও শারীরিক দুর্বলতা দূর করে শরীরকে সতেজ রাখে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
মধুতে রয়েছে বিভিন্ন প্রাকৃতিক মন্টোজ,অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এর ফলে নিয়মিত খাঁটি মধু খেলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়।
রক্তশূন্যতা দূর করে
যেসব মানুষেরা রক্তশূন্যতায় ভুগছেন, মধু তাদের জন্য অত্যন্ত উপকারি একটি খাওয়ার। এটি সব মানুষই খেতে পারে। রক্তে হিমোগ্লোবিন এর পরিমাণ বৃদ্ধিতে সহায়তার মাধ্যমে মধু শরীরের রক্তশূণ্যতা দূর করে আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে।
হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
বর্তমানে প্রতিটি মানুষেরই প্রায় হজমের সমস্যা হয়ে থাকে এই সমস্যা দূরীভূত আমরা করতেই পারি। মধু তে থাকা অ্যামাইনো এসিড আমাদের শরীরের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
দাঁত মজবুত করে
দাঁতের সমস্যা হলে প্রতিটি মানুষেরই খুব কষ্ট হয়। তাই দাঁত কে মজবুত করা আমাদের উচিত বলেই মনে হয়।মধুতে থাকা খনিজ লবণ মনটোজ ইত্যাদি আমাদের মারিকে শক্ত রাখে ও দাঁতকে মজবুত করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
মধু তে থাকা অ্যামাইনো এসিড আমাদের শরীরের কোষ্ঠকাঠিন্য নামক রোগকে দূর করে। ফলে আমরা সুস্থ থাকতে পারি।
বাতের ব্যথা নিরাময় করে
নিয়মিত মধুপান করার ফলে আমাদের শরীরের বাতের ব্যথা ও নানারকম ব্যথা বেদনা দূর হয়। ফলে আমরা ভালোভাবে হাঁটাচলা করতে পারি।
যৌন দুর্বলতা দূর করে
যৌন দুর্বলতা থাকলে নারী থেকে পুরুষ সবাইরেই ভবিষ্যৎ জীবনে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাই শারীরিক এবং যৌন দূর্বলতা দূরীকরণে মধুর রয়েছে বিশেষ ভূমিকা। মধু খাওয়ার পাশাপাশি অবশ্যই ডাক্তার এর সু-পরামর্শ নেওয়া উচিত।
হাড় মজবুত রাখে
মধু যেমন আমাদের হারকে মজবুত রাখে ঠিক তেমনি শিশুদের হাড়ের গঠন মজবুত করতে সাহায্য করে এই মধু অর্থাৎ বাচ্চা থেকে বয়স্ক সবারই পক্ষে মধু সেবন করা উচিত।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে
আজকালকার যুগে বেশিরভাগ মানুষের ভুলে যাওয়া একটি রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে, অর্থাৎ স্মৃতিশক্তি হাস হচ্ছে। তার জন্য অর্থাৎ স্মৃতিশক্তি যাতে ঠিক থাকে তার জন্য আমাদের মধু খাওয়া উচিত।
মধু খাওয়ার অপকারিতা
1. বর্তমানে কোষ্ঠকাঠিন্য একটি স্বাভাবিক রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর যেসব খাদ্য কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়িয়ে দেয় সেই সব খাদ্য কম খাওয়া উচিত। বেশি পরিমাণ মধু খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য নামক রোগ দেখা দেয়। কিন্তু পরিমান মত মধু আমাদের শরীরের জন্য খুবই ভালো।
2. মধু খাওয়া আমাদের শরীরের পক্ষে খুবই উপকারী কিন্তু সঠিক পরিমাণ মধু না খেলে আপনাদের পেটে ব্যথা হতে পারে।
3. মধু আপনার রক্তে শর্করার মাত্রাও বাড়িয়ে দিতে পারে এবং তারপরে আপনার দেহে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
4. কোন জিনিস কিংবা খাদ্য আমাদের শরীরের জন্য ভালো নয়। তাই প্রতিটি জিনিসই কিংবা খাদ্য বুঝেশুনে আমাদের খাওয়া উচিত। ঠিক তেমনি অতিরিক্ত মধু খাওয়া আপনার স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি করতে পারে।
5. মধু দাঁতের জন্যও ভাল নয়। অতিরিক্ত মধু খেলে দাঁতের ক্ষয় রোগ দেখা যায়। দাঁত দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে যায়।