ভাইফোঁটা দিতে গেলে ভাইফোঁটার সঠিক নিয়ম ও ভাইফোঁটার মন্ত্র জানতে হয় এবং বাংলা ভাষায় ভাইফোঁটা মন্ত্র উচ্চারণ করতে হয় কিন্তু ভাইফোঁটার সঠিক নিয়ম ও ভাইফোঁটার মন্ত্র না জানলে ভাইয়ের অমঙ্গল হবে। তাই জেনে নিন ভাইফোঁটার মন্ত্র ও নিয়ম।
Table of Contents
ভাইফোঁটার মন্ত্রটি হল
‘ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যম দুয়ারে পড়ল কাঁটা।
যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা।’
ভাইফোঁটার সঠিক নিয়ম
1. চন্দনের ফোঁটা
ভাইফোঁটার দিন বোনেদের তাদের ভাইদের কপালের নিচে বোন তার কনিষ্ঠ আঙ্গুল দিয়ে চন্দনের ফোঁটা পরিয়ে দিয়ে দিতে হয়। তবে চন্দনের সঙ্গে দই মিশিয়ে দেওয়া যেতে পারে অর্থাৎ দই মিশ্রিত চন্দন দিয়ে ভাইকে ফোঁটা দেওয়া যায়।
2. ভাই ফোঁটার মন্ত্র পড়ার নিয়ম
চন্দনের ফোঁটা বা দই মিশ্রিত চন্দনের ফোঁটা দেবার সঙ্গে সঙ্গে ভাইফোঁটার মন্ত্রটিও উচ্চারণ করতে হয় অর্থাৎ “ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যম দুয়ারে পড়ল কাঁটা,যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, আমি দেই আমার ভাইকে ফোঁটা” এই মন্ত্রটি তিনবার উচ্চারণ করতে হবে।
**দাড়াঁস সাপ ভেবে সিন্ধু কালাচ সাপকে চুমু, সাপের কামড়ে মৃত্যু এই যুবকের সম্পূর্ণ খবর দেখতে ক্লিক করুন
3. ভাই ফোঁটার মন্ত্রটি কতবার উচ্চারণ করতে হবে
এখন প্রশ্ন হচ্ছে ভাই ফোঁটার মন্ত্রটি ঠিক কতবার উচ্চারণ করতে হবে ? অনেকে ভাইফোঁটার মন্ত্রটি একবার মাত্র উচ্চারণ করে ভাইয়ের কপালে চন্দনের ফোটা দিয়ে থাকে তবে এটি সঠিক পদ্ধতি নয়। ভাইকে তিনবার চন্দনের ফোঁটা দিতে এবং প্রত্যেকবার ফোঁটা দেওয়ার সময় ভাইফোঁটার এই মন্ত্রটি পড়তে হয়। এটাই ফোঁটার সঠিক নিয়ম। এর ব্যতিক্রম হলে ভাইয়ের অমঙ্গল হবে।
4. ভাই ফোঁটার সময় অবশ্যই পালনীয় আরও কিছু নিয়ম
a. এছাড়াও হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে ভাইফোঁটা দেওয়ার সময় ভাইকে অবশ্যই কাঠের পিড়ি বা আসনে বসতে দিতে হয় খালি মেঝেতে একেবারেই নয়।
b. দিদি বা বোনেরা অবশ্যই মনে রাখবে বাড়ির পূর্ব অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিকের ঘরে ভাইফোঁটা দেবে কারণ বাস্তু শাস্ত্র তাই বলে।
c. ভাইকে ফোঁটা দেওয়ার সময় সমস্ত জিনিস কাঁসা বা পিতল না হলে ধাতব যে কোন পাত্রে রাখবে ।
d. নতুন অথবা অবশ্যই পরিষ্কার ও ধোয়া জামা কাপড় পড়তে হবে।
5. ধান রাখা ও দূর্বা ঘাসের শীষ
ভাইয়ের কপালে চন্দনের ফোঁটা দেওয়া ও মন্ত্র পড়ার পর বোন তার ভাইয়ের মাথায় ধান রাখে ও দূর্বা ঘাসের শীষ রাখে সঙ্গে ঈশ্বরের কাছে ভাইয়ের মঙ্গল কামনা করে।
5. শঙ্খ বাজানো ও উলুধ্বনি দেওয়ার নিয়ম
যখন ভাইয়ের কপালে চন্দনের ফোটা দেওয়া হয় এবং ভাইয়ের মাথায় ধান ও দূর্বা ঘাসের শীষ দেওয়া হয় উভয় সময়েই শঙ্খ বাজানো ও উলুধ্বনি দিতে হয় তাহলে ভাইয়ের মঙ্গল হয়, অমঙ্গল হয় না।
6. ভাই ফোঁটার সময় ভাইয়ের কর্তব্য
ভাই ফোঁটা দেওয়ার ক্ষেত্রে বোনের যেমন উপরেোক্ত নিয়ম গুলো মেনে চলতে হয় তেমনি ভাইয়েরও কিছু কর্তব্য আছে। যেমন বোন যদি বয়সে বড় হয় অর্থাৎ দিদি হয় তাহলে তাকে প্রণাম করা এবং ঈশ্বরের কাছে তার মঙ্গল কামনা করা। আর বোন বয়সে ছোট হলে তাকে আশীর্বাদ করা এবং ঈশ্বরের কাছে তার মঙ্গল কামনা করতে হয়।
7. মিষ্টিমুখ বা মিষ্টি খাওয়ানো
ভাই ফোঁটা দেওয়ার সময় উপরে নিয়মগুলি পালন করার পর ভাইকে মিষ্টিমুখ করাতে হয় তবে সঙ্গে ভাই বোনকেও মিষ্টিমুখ করাতে পারে।
8. ভাই ফোঁটায় উপহার বা গিফট দেওয়া কি খুব জরুরী
একটা প্রশ্ন অনেকের কাছেই আসে যে ভাই ফোটায় উপহার দেওয়া কি খুব জরুরী ? ভাই ফোঁটায় ভাই ও বোন পরস্পরকে উপহার দিতেই পারে তবে এর কোন বাধ্যবাধকতা নেই কারণ একদিন উপহার দিয়ে সারা বছর ভাই এবং বোন পরস্পরের উপর কোন কর্তব্য পালন করলো না তাহলে সেই উপহারের কোন অর্থই হয় না বরঞ্চ উপহার না দিয়েও যদি ভাই ও বোন পরস্পরের মঙ্গল কামনা ও ঈশ্বরের কাছে আশীর্বাদ চায় এবং সারাটা বছর পরস্পরের সুখ দুঃখ এবং আপদ বিপদে পাশে দাঁড়ায় সেটাই হল পৃথিবীর সবথেকে বড় উপহার বা গিফট।
এইভাবে সঠিক নিয়মে ভাইফোঁটা করলে সঠিকভাবে ভাইফোঁটা প্রথাকে অনুসরণ করা হয়।
ভাইফোঁটার ইতিহাস
ভাইপোটাকে আমরা ভাতৃদ্বিতীয়া নামেও জেনে থাকি। কিছু কথা এ বিষয়ে প্রচলন আছে প্রথমত বলা হয় একদিন মৃত্যুর দেবতা যম তার বোন যমুনাকে ফোটা দিয়েছিল তাই হয়তো ভাই ফোঁটার মন্ত্রে যম ও যমুনার কথা উল্লেখ আছে । দ্বিতীয় মত অনুসারে শ্রীকৃষ্ণ নরকাসুর নামে এক দৈত্যকে হত্যা করে আসলে তার বোন সুভদ্রা তার কপালে ফোঁটা দিয়ে মিষ্টি খেতে দেয় তারপর থেকেই ভাই ফোটার প্রচলন তবে।
ভাইফোঁটার সময় 2023
এটি সাধারণত কার্তিক মাসের শুক্লাদ্বিতীয় তিথিতে অর্থাৎ কালী পূজোর দুদিন পরেই অনুষ্ঠিত হয় তবে মাঝে মাঝে শুক্লপক্ষের প্রথম দিনেও উদযাপিত হয়ে থাকে ।
ভাইফোঁটার তিথি 2023
কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে পড়ছে 2023 এর 14 নভেম্বর দুপুর 2 টো 36 মিনিটে এবং শেষ হবে 15 নভেম্বর 1 টা 47 মিনিটে।
ভাইফোঁটা নিয়ে আরো কিছু তথ্য
বাঙ্গালীদের কাছে ভাইফোঁটার উৎসব ভাতৃদ্বিতীয়া ছাড়াও যমফোঁটা বা যমটিকা নামেও পরিচিত। তবে অবাঙালিরা এই দিনটি ভাইদুজে হিসাবে পালন করে। আবার দার্জিলিং সহ উত্তরবঙ্গে একে ভাইটিকা বলা হয়। নাম যাই হোক সব জায়গায় ভাইফোঁটার উদ্দেশ্য একে অপরের কল্যাণ এবং মঙ্গল সাধন ও ঈশ্বরের কাছে আশীর্বাদ কামনা।