আর কিছুদিন পরেই সরস্বতী পূজা ২০২৪ (saraswati puja 2024)। সকলকে জানাই অগ্রিম সরস্বতী পূজার শুভেচ্ছা ২০২৪ (saraswati puja wishes 2024)। আমরা সবাই জানি সরস্বতী ঠাকুর আমাদের বিদ্যার দেবী। ঋকবেদে প্রথম সরস্বতী ঠাকুরের উল্লেখ পাওয়া যায়। এই সরস্বতী ঠাকুর কি করে বিদ্যার দেবী হয়ে উঠলেন সেটাই আজকে আমাদের আলোচ্য বিষয়বস্তু। এই বিদ্যার দেবী হয়ে ওঠার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে।
বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। ঠিক তেমনি জানুয়ারি মাস কেটে ফেব্রুয়ারির মাঝখানে বেশিরভাগ সময়েই সরস্বতী পুজোর দিন পরে। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে ২০২৪ সালের সরস্বতী পূজা কত তারিখ? এইবার সরস্বতী পূজা ২০২৪ সালে বুধবার ১৪ই ফেব্রুয়ারি সরস্বতী পূজোর তারিখ।
সরস্বতী পুজো প্রত্যেকটি বাঙালি পড়ুয়াদের কাছে বড়ই আবেগের একটি দিন। যেদিন সকাল সকাল উঠেই বাচ্চারা স্নান সেরে স্কুল কিংবা পাড়ায় পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার জন্য সেজেগুজে শাড়ি পাঞ্জাবি পড়ে বেরিয়ে পড়ে। এমনকি স্কুল-কলেজের পড়ুয়া রাও নিজেদের বন্ধু-বান্ধবীর সাথে এই দিন পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার পর ঘুরতেও বেরিয়ে পড়ে নিজেদের ইচ্ছেমত।
সরস্বতী পূজা বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা
সরস্বতী পূজার শুভেচ্ছা ২০২৪
সরস্বতী পূজার দিন সকাল সকাল প্রিয়জনদের সরস্বতী পূজার শুভেচ্ছা না জানালে ভালো লাগে না। তাই আমরা প্রিয়জনকে সরস্বতী পূজার শুভেচ্ছা ছবি পাঠিয়ে থাকি। অনেক সময় এই শুভেচ্ছা বার্তার সঙ্গে সরস্বতী পূজার মন্ত্র পুষ্পাঞ্জলি ও লিখে পাঠাতে পারি। এছাড়া আমরা বলতে পারি “শুভ সরস্বতী পূজার শুভেচ্ছা ২০২৪”।
২০২৪ সালের সরস্বতী পূজা কত তারিখ
প্রতিবছর ফেব্রুয়ারির মাঝখানে বেশিরভাগ সময়েই সরস্বতী পুজোর দিন পরে। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে ২০২৪ সালের সরস্বতী পূজা কত তারিখ? এইবার সরস্বতী পূজা ২০২৪ সালে বুধবার ১৪ই ফেব্রুয়ারি সরস্বতী পূজোর তারিখ পড়েছে।
২০২৪ সালের সরস্বতী পূজা তিথি
২০২৪ সালের সরস্বতী পূজা তিথি শুক্ল পঞ্চমী ১৪ই ফেব্রুয়ারি বুধবার সন্ধ্যা ০৬:০১ পর্যন্ত
সরস্বতী ঠাকুরের উৎপত্তি
সরস্বতী এটি মূলত একটি নদীর নাম। হিন্দু পুরানে এর জন্য সরস্বতীকে এক নদীর দেবী হিসেবে উপস্থাপনা করা হয়েছে।
সরস্বতী মূলত বৈদিক দেবী। ঋকবেদে সরস্বতী প্রধানত নদীর অধিষ্ঠাত্রী দেবী।ঋগ্বেদের দ্বিতীয় মন্ডলে সরস্বতী কে ,শ্রেষ্ঠ মাতা, শ্রেষ্ঠ নদী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। সরস শব্দের অর্থ জল। অতএব সরস্বতী শব্দের আদি অর্থ হলো জলবতী অর্থাৎ নদী।
ভগবতপুরানে কথিত আছে, বিষ্ণুর জিহ্বা থেকে সরস্বতী ঠাকুরের উৎপত্তি হয়েছিল বলেই নাকি সরস্বতী বাক এবং সৃজনশীলতার শক্তির অধিকারী।
সরস্বতী ঠাকুরের পরিচয়
প্রথমেই বলে রাখি সরস্বতী ঠাকুরের পরিচয় নিয়ে নানা মতভেদ রয়েছে। কিন্তু প্রতিটি মানুষের যে রকম পরিচয় থাকে সেরকম সরস্বতী ঠাকুরের ও পরিচয় রয়েছে।
হিন্দু পুরাণ অনুসারে ব্রহ্মা দেবী সরস্বতী সাহায্যে এই মহাবিশ্বের সমস্ত জীবকে সৃষ্টি করেছেন। যিনি সৃজনশীল সৃষ্টি করেছেন। হিন্দু পুরাণের কিছু অংশ থেকে আমরা জানতে পারি মহাবিশ্ব সৃষ্টির পর সরস্বতীকে ব্রহ্মা দেব বিবাহ করলেও বিষ্ণুর প্রথম স্ত্রী সরস্বতী।
বিষ্ণু সরস্বতীর পিতা হওয়া সত্বেও সরস্বতীর গুণের জন্য বিবাহ করেছিলেন এ নিয়েও নানা সমালোচনা রয়েছে। কিন্তু পুরানে রয়েছে বিষ্ণুর বিবাহ সরস্বতীর সাথেই হয়েছিল। তার জন্য সরস্বতী বিষ্ণুর উপর খুব ক্ষুব্ধ ছিলেন।
অপরদিকে আমরা এও জানি, মহাদেব শিব এবং মাতা দুর্গার চারজন সন্তানের মধ্যে একজন হলেন কন্যা সরস্বতী।
সরস্বতীর বীণার নাম কি?
পুরান অনুযায়ী, নারদ মুনি বাদ্যযন্ত্র বীণা এর প্রথম ব্যবহার কিংবা আবিষ্কার করেন। কোথাও কোথাও বলা হয়েছে তানপুরা এর আবিষ্কার ও নারদ মুনি করেন। অথর্ব বেদে এই বীণা শব্দটির উল্লেখ পাওয়া যায়। সরস্বতীর বীণার নাম কচ্ছপী।
সরস্বতী ঠাকুরের বাঁ হাতের উপরের দিকে এবং ডান হাতে নিচের অংশে বীণা ধরতে দেখা যায়। এর থেকেই বোঝা যায় তিনি সম্পূর্ণ জ্ঞানের আধার ছিলেন এবং এবং একটি বিশেষ শক্তির আঁধার ছিলেন তিনি। সরস্বতী বিদ্যার দেবী বলেই তার কাছে থাকেবীণা।
সরস্বতী ঠাকুর মর্তে কিভাবে পূজিত হলেন
সরস্বতী সাধারণত দ্বিভুজা বা চতুর্ভুজা মূর্তিতে মর্তে পূজিত হয়ে থাকে। দ্বিভুজা মূর্তিতে তাঁর হাতে থাকে বীণা ও পুস্তক|চতুর্ভুজা মূর্তিতে থাকে পুস্তক ও অক্ষমালা। হিন্দু ধর্মে এই প্রতিটি বস্তুরই একটি প্রতীকি ব্যবহার রয়েছে। সরস্বতী ঠাকুর মূলত জ্ঞান সংগীত কলা প্রজ্ঞা বিদ্যারজনের দেবী। এই দেবী হয়ে ওঠার পিছনে নানাবিধ কারণ রয়েছে।
সরস্বতীর বহুমুখী প্রকৃতি, প্রজ্ঞা, সৌন্দর্য এবং বীরত্বপূর্ণ কাজগুলি তাকে প্রাচীন ভারতীয় পৌরাণিক কাহিনীর বিভিন্ন দিক জুড়ে সম্মানিত ব্যক্তিত্ব করে তোলে। ধ্যানমন্ত্রে বর্ণিত প্রতিমাকল্পটিতে দেবী সরস্বতী দেবীকে শ্বেতবর্ণা, পদ্মে, মুক্তার হারে ভূষিতা, পদ্মলোচনা ও বীণাপুস্তকধারিণী এক দিব্য নারীমূর্তিরূপে কল্পনা করা হয়েছে।
সরস্বতী ঠাকুরের অন্যান্য নাম
বীণাপাণি, বীণাবাদিনী, ভারতী, বাণী, বাগ্দেবী ইত্যাদি নানা নাম রয়েছে সরস্বতী ঠাকুরের।
সরস্বতী ঠাকুর কে কেন বিদ্যার দেবী বলা হয়?
পুরান অনুযায়ী সরস্বতী ঠাকুর ছিলেন সর্বগুনা সম্পন্ন একজন দেবী। পুরানে কথিত রয়েছে সরস্বতী ঠাকুরের সৌন্দর্যে নাকি ব্রহ্মা দেব এতটাই আকৃষ্ট হয়েছিলেন যে তিনি যে দিকে তাকাতেন সেদিকেই সরস্বতীর সৌন্দর্য দেখতে পেতেন। এমনকি ব্রহ্মা তার ক্ষমতা দেখে সব সময়ের জন্যই মুগ্ধ হয়েছিলেন। তাই ব্রহ্মা তার স্ত্রী সরস্বতীর নাম “বাগদেবী”“ দিয়েছিলেনউপহার স্বরূপ দিয়েছিলেন।
সরস্বতী প্রথম ঋগ্বেদে আবির্ভূত হয় এবং পরবর্তী ধর্মীয় গ্রন্থে সরস্বতী কে সংস্কৃতের উদ্ভাবক দেবী বলেই মনে করা হয়। এবং তিনি গণেশ ঠাকুরকে উপহার স্বরূপ দিয়েছিলেন কলম ও কালি । এও জানা যায় তিনি নাকি কলা ও বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন।
সরস্বতী ঠাকুর বরাবরই জ্ঞানের প্রতিনিধিত্ব করে এসেছেন। তাই আমরা সরস্বতী ঠাকুর কে বিদ্যার দেবী বলেই মনে করি। মরতে এজন্যই সরস্বতী ঠাকুর বিদ্যার দেবী রূপেই পূজিত হয়েছেন।
সরস্বতী পূজার মন্ত্র পুষ্পাঞ্জলী
“সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যেকমললোচনে,
বিশ্বরূপে বিশালাক্ষী বিদ্যাং দেহি নমস্তুতে।
জয় জয় দেবী চরাচর সারে,
কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে।
বীণারঞ্জিত পুস্তক হস্তে,
ভগবতী ভারতী দেবী নমোস্তুতে।
আরও পড়ুন
হরলিক্স কি ক্ষতিকারক? জানুন হরলিক্স এর উপকারিতা ও অপকারিতা 10টি
সরস্বতী পূজা কত তারিখ ২০২৪ ?
সরস্বতী পূজা ২০২৪ সালে বুধবার ১৪ই ফেব্রুয়ারি শুক্ল পঞ্চমী সন্ধ্যা ০৬:০১ পর্যন্ত।
1 thought on “সরস্বতী পূজার শুভেচ্ছা ২০২৪: জানলে অবাক হবেন সরস্বতী কেন বিদ্যার দেবী হয়ে উঠলো?”