২০২৪ সালে খিরাই ফুলের বাগান বাংলার ফুলের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে

পূর্ব মেদিনীপুর জেলার একটি ছোট্ট জায়গা হল খিরাই। খিরাই ফুলের বাগান ২০২৪ সালে বাংলার ফুলের স্বর্গরাজ্য হয়ে হয়ে দাঁড়িয়েছে ফুল প্রেমিকদের কাছে। এখানে যতদূর চোখ যাবে রং-বেরঙের ফুলের বাগান। এই খিরাইতে রয়েছে ফুলের উপত্যকা যা khirai flowers garden নামেও পরিচিত। ঠিক যেদিন থেকে জানতে পেরেছিলাম ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার আখ্যা দেওয়া হয়েছে খিরাইকে, সেদিন থেকেই ক্ষীরাই যাওয়ার ইচ্ছা অনেকখানি বেড়ে গিয়েছে।

খিরাইতে গিয়ে মনে হয়েছে ফুলের স্বর্গে পৌঁছে গিয়েছি। দৈনন্দিন জীবনে আমাদের বহু ব্যস্ততার মধ্যে কাটাতে হয়। এই একঘেয়েমি জীবন থেকে মুক্তি পেতে অবশ্যই একবার খিরাই ফুলের রাজ্যে আমাদের যেতেই হবে।

ক্ষীরাই সমন্ধে বিভিন্ন আজানা তথ্য

খিরাই একটি ছোট্ট গ্রাম হলেও সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রা বেশ সাজানো-গোছানো সুন্দর। এখানকার মানুষ কষ্ট করে তাদের জমিতে ফুল চাষ করে। আর এই ফুল তুলে তারা বিক্রি করে জীবন ধারণ করে।

যেদিকেই আমরা তাকাবো সেদিকেই রংবেরঙের সুন্দর সুন্দর নানা ধরনের বিঘার পর বিঘা ফুলে ভরা ক্ষীরাই ফুলের বাগান দেখতে পাবো। ফুল আর শিশু দুটোই নিষ্পাপ। তাই ফুল ও শিশুর সান্নিধ্যে আমরা থাকলে আমরা বেশ ভালোই থাকি।

ফুলের পাশাপাশি এখানকার জমিতে নানা ধরনের সবজি চাষ করে থাকেন এখানকার মানুষজন। ক্ষীরাই তে গিয়ে মনে হবে আমরা ছোটবেলার আকার বইতে গ্রামের যে ছবি দেখতাম ঠিক সেই রকম।

আমাদের মনের কল্পনাতে গ্রামের ছবি আমরা যেভাবে দেখি যেমন গ্রামে মাটির ঘর, গোয়াল ঘর, সুন্দর একটি উঠান, তুলসী তলার স্নিগ্ধতা, বিঘার পর বিঘা জমি মানুষেরা চাষবাস করছে সেখানে, মানুষের কঠোর হাসি মুখে জীবনযাপন ঠিক সেরকমই একটি জায়গা ক্ষীরাই। যেখানে গিয়ে আমরা একটি জীবন্ত গ্রামের ছবি দেখতে পাই।

কোথায় অবস্থিত খিরাই ফুলের বাগান?

কাঁসাই নদীর পাশেই অবস্থিত খিরাই একটি ছোট্ট গ্রাম। প্রত্যেক বছর কাঁসাই নদীর জলে ক্ষীরাই প্লাবিত হয়। এই প্লাবিত জলাভূমিতে ফুল ও সবজির চাষ বেশ ভালো হয়। এটি হাওড়া-খড়গপুর লাইনের একটি ছোট রেলওয়ে স্টেশন। কাঁসাই নদীর দুপাশের অংশ জুড়েই বিঘার পর বিঘা ফুল চাষ হয় সেটাই মূলত খিরাই ফুলের বাগান।

খিরাই একটি ছোট্ট গ্রাম
খিরাই একটি ছোট্ট গ্রাম

ক্ষীরাই তে কিভাবে যাবেন

হলদিয়া থেকে ক্ষীরাইতে যেতে হলে হলদিয়া হাওড়া লোকাল ধরে পাঁশকুড়ায় নেমে হাওড়া থেকে মেদিনীপুর কিংবা খড়গপুর লোকাল ধরে পাঁশকুড়ার পরে স্টেশন খিরাইতে নেমে যাবেন। আর যদি আপনি হাওড়া থেকে যেতে চান তাহলে মেদিনীপুর বা খড়্গপুর লোকাল ধরে ক্ষিরাই তে নেমে যাবেন।

খিরাই স্টেশনে নেমে ডানদিকের মাটির রাস্তা ধরে 10 থেকে 15 মিনিট হাঁটতে হবে। এই রাস্তাটি মোটামুটি দেড় থেকে ২ কিলোমিটার হবে। এই রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে দেখতে পাবেন রাস্তার দুধ ধরে নানা রকমের চাষ হয়েছে । এমনকি মাঠগুলি যখন ফাঁকা থাকে তখন পিকনিক ও পরিবারের সাথে করতে পারেন। কিছু সময় হেঁটে আপনারা পৌঁছে যাবেন খিরাই ফুলের রাজ্যে|

বছরের কোন সময় যাবেন

সাধারণত ক্ষীরাই তে শীতকালীন ফুল লাগানো হয়। মোটামুটি পুজোর পর থেকেই ফুল চারা লাগানো হয়।তাই জন্য ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি এই কটি মাস এখানে আসার জন্য উপযুক্ত সময়। আপনারা চাইলে অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের যে কোন সময় আসতে পারেন।

ফুলের মেলা কখন হয়

ক্ষিরাই এর জমিতে বিঘার পর বিঘা যে ফুল চাষ করা হয় গ্রামবাসীরা সেই ফুল নিয়ে একটা মেলা করেন। এখানে থাকে নানা ধরনের ফুল। এই ফুল আপনারা কিনে বাড়িতেও আনতে পারেন আবার নানা ধরনের ফুলের মুকুট বানিয়ে পড়তে পারেন। এই মেলা হয় সাধারণত জানুয়ারি মাসের দিকেই । আবার কোন কোন বছর যদি কাসাই নদীর জলে ক্ষীরাই এর জমি প্লাবিত হয় সেই বছর মেলা খানিক দেরিতে হয়।

কি কি দোকান বসে

ক্ষীরাইএর ফুলের বাগানের মেলাতে সব রকমের ফুলের চারা, সব রকমের ফুল পাওয়া যায়। আপনি যদি বাড়ি থেকে খাবার না নিয়ে যান তাহলে ওখানে গিয়ে ফাস্টফুড কিনে খেতে পারেন। শীতকালীন সময়ে নলেন গুড়ের তৈরি আইসক্রিমও পাওয়া যায়। যারা নলেন গুড়ের তৈরি আইসক্রিম খেতে চান তারা অবশ্যই খিরাই পৌঁছে যাবেন। হাওয়াই মিঠাই, চকলেট, বিস্কুট, বাচ্চাদের খেলনা ইত্যাদি নানা ধরনের জিনিস পাওয়া যায়।

ট্রেনের টিকিট কত টাকা

অল্প খরচেই আপনারা হাওড়া কিংবা হলদিয়া থেকে খিরাই পৌঁছে যেতে পারেন। একদিনের এই ঘুরতে যাওয়ারঅভিজ্ঞতা আপনার সারা জীবনের সাথী হয়ে থাকবে। হলদিয়া থেকে খিরাই যেতে ট্রেনের টিকিট 20 টাকা লাগে। হাওড়া থেকে খিরাই এর ট্রেনের ভাড়া ৩০ টাকা।

আরও পড়ুন

গঙ্গাসাগর মেলার অজানা অনেক ইতিহাস আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব

খিরাই ফুলের বাগান কিভাবে ভাইরাল হল?

খিরাই তে গিয়ে ওখানকার মানুষের সাথে কথা বলে জানতে পারি করোনার পর অর্থাৎ ২০২১ সাল থেকে খিরাইয়ের ফুলবাগান দেখতে মানুষের ভিড় জমে| উনারা বলেন একজন ইউটিউবার এসে এখানকার ফুলের বাগানের ভিডিও করেন, সেখান থেকেই লোকোমুখে প্রচার হয় খিরাইয়ের ফুল বাগানের কথা| মূলত সোশ্যাল মিডিয়া থেকেই খিরায়ের ফুলবাগান ভাইরাল হয়।

শেয়ার করুন:
Titli Ray

আমি Titli Ray,,আমি ২০১৭ সাল থেকে লেখালেখির সঙ্গে এবং ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে জড়িত ও ভিডিও তৈরি করি। আমি আপনাদেরকে আমার অভিজ্ঞতা ও তথ্য শেয়ার করব। ধন্যবাদ।

Leave a comment