সিন্ধু কালাচ সাপ-কে (sindhu kalach) দাড়াঁস সাপ ভেবে চুমু খেতে গিয়ে সাপের কামড়ে মৃত্যু হল এক যুবকের। সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হবে বলে তার এই ভয়ংকর দুঃসাহসিক কাজ। মৃত যুবক শফিকুল ইসলাম শরীফ বাংলাদেশের সরপুকুর ইউনিয়নের তেলিপাড়া এলাকার বাসিন্দা। পিতার নাম সলিমুল্লাহ।
আপনি যে অংশ পড়তে চান, নিন্মে সেই অংশে ক্লিক করতে পারেন
সিন্ধু কালাচ সাপ-এর ঘটনা ও তার উৎস
গত কয়েকদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে কয়েকজন যুবক দাড়াঁস সাপ ভেবে সিন্ধু কালাচ সাপ-কে নিয়ে খেলা করছিল এবং এই ঘটনাটি তারা ভিডিও করে রাখে কারণ সোশ্যাল মিডিয়াতে এই ভিডিওটি ছেড়ে ভাইরাল হবে এই উদ্দেশ্যে কিন্তু তারা ভাবতে পারেনি যাকে তারা দাড়াঁস সাপ বলে ভাবছে সেটি আসলে এশিয়ার মধ্যে অন্যতম ভয়ংকর একটি সাপ যার নাম সিন্ধু কালাচ।
সিন্ধু কালাচ সাপ-এর বিষের ভয়ংকরতা
আমরা জানি কালাচ সাপ এমনিতেই ভয়ঙ্কর কিন্তু সিন্ধু কালাচ তার থেকেও বেশি ভয়ংকর। এই সাপ কামড়ালে তেমন জ্বালাপোড়া প্রথম দিকে নাও থাকতে পারে কিন্তু সময়মতো চিকিৎসা না পেলে রোগীর মৃত্যু অবশ্যম্ভী। ঐ সিন্ধু কালাচ সাপ-কে নিয়ে যখন ওই যুবকগুলি খেলা করছিল তখন তারা কেউ জানে না ঐ সাপটি এতই ভয়ংকর যে, ঐ সাপের এক ছোবলে এত পরিমাণ নিউরোটক্সিন বিষ বেরোয়, যা প্রায় কুড়িটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জীবন কেড়ে নিয়ে যেতে পারে।
সিন্ধু কালাচ সাপ কোন প্রজাতির
সিন্ধু কালাচ সাপ মূলত কালাচ সাপ প্রজাতির মধ্যে পড়ে। সিন্ধু কালাচ সাপ ওয়ালস ক্রেইট সাপ নামেও পরিচিত। কালাচ সাপের মত সিন্ধু কালাচ সাপের বিষেও ভয়ানক নিউরোটক্সিন বিষ থাকে। এর বিষের পরিমাণ কালাচ সাপের থেকেও অনেক বেশি। এর কামড়ে হাতির মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।
সিন্ধু কালাচ সাপ দেখতে কেমন? অথবা সিন্ধু কালাচ সাপ ও কালাচ সাপের মধ্যে পার্থক্য কোথায়?
এখনো অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে সিন্ধু কালাচ সাপ দেখতে কেমন? অথবা সিন্ধু কালাচ সাপ ও কালাচ সাপের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? কালাচ সাপ যেখানে আকারে ঘরচিতি বা তার থেকে একটু বড় হয় কিন্তু কালাচ সাপ-এর তুলনায় সিন্ধু কালাচ সাপ অনেকটাই বড় হয়। সিন্ধু কালাচ সাপ দাড়াঁস সাপের মতন দীর্ঘ হয়। তাই অনেকে ভুল করে সিন্ধু কালাচ সাপকে দাড়াঁস সাপ ভেবে বসেন এবং সিন্ধু কালাচ সাপ থেকে দূরত্ব বজায় রাখার পরিবর্তে দাড়াঁস সাপ ভেবে সিন্ধু কালাচ সাপকে ধরার চেষ্টা করে। তার ফল হয় খুবই খারাপ। সাধারণত সিন্ধু কালাচ সাপ শান্ত প্রকৃতির হলেও তার গায়ে আঘাত লাগলে সে অবশ্যই ছোবল মারে, আর মানুষ ভুল ভেবে সিন্ধু কালাচ সাপকে তারা দাড়াঁস সাপ ভেবে ভুল করে অনেক সময় চিকিৎসার প্রয়োজন বোধ করে না। ফলে মৃত্যুর মতন দুর্ঘটনা প্রায় ঘটতে দেখা যায়।
সিন্ধু কালাচ সাপ কোথায় থাকে
সিন্ধু কালাচ সাপ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে যেমন ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, আফগানিস্তান প্রভৃতি অঞ্চলে দেখা যায়। এই সাপ বনে জঙ্গলে এমনকি বাড়ির আশেপাশেও বাস করে। বাড়ির আশপাশে জমে থাকা জঙ্গল, ইটের পাজা, কাঠের স্তুপ এমনকি জলাকীর্ণ এলাকার পাশেও এদের দেখতে পাওয়া যায়।
সিন্ধু কালাচ সাপ কোন সময় দেখা যায়
গরম প্রিয় এই সিন্ধু কালাচ সাপ যেকোনো সময় দেখতে পাওয়া গেলেও বর্ষাকালে এদের উৎপাত বেশি বাড়ে। সাধারণত সন্ধ্যা রাতে বা রাতের বেলায় এই সিন্ধু কালাচ সাপ তার খাবারের খোঁজে বেরোয় এবং মানুষের সামনাসামনি হয়ে গেলে ভয়ংকর বিপদের সম্ভাবনা দেখা দেয়। তবে কালাচ সাপ যেরকম মানুষের ঘরে বা বিছানায় উঠে যায় কিন্তু এই সাপের ক্ষেত্রে এই ধরনের ঘটনার সম্ভাবনা খুব কম দেখা গেছে।
সিন্ধু কালাচ সাপ কি খাবার খায়
অন্যান্য সাপের মতোই এইসব ব্যাংঙ, টিকটিকি, পোকামাকড় এমন কি ছোট সাপও খেয়ে নেয়। তাইতো ব্যাংঙ টিকটিকির খোঁজে ঘরের আশেপাশে এরা ঘোরাঘুরি করে। অনেক সময় ভুল করে ঘরেও ঢুকে পড়ে।
সিন্ধু কালাচ সাপ থেকে বাঁচার উপায়
সিন্ধু কালাচ সাপসহ যে কোন সাপ থেকেই বাঁচার একমাত্র উপায় হল বাড়িঘর ও আশেপাশের অঞ্চল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা । কারণ বাড়িঘর অপরিচ্ছন্ন থাকলে সেইসব জায়গায় ব্যাংঙ, টিকটিকি, পোকামাকড়ের বসবাস জন্মাবে এবং ওই ব্যাংঙ, টিকটিকি পোকামাকড় খাওয়ার লোভে এই ধরনের সাপ চলে আসতে পারে। তাই অতি শীঘ্রই আপনার বাড়ির আশেপাশের জঙ্গল, ইটের পাঁজা, জমাকৃত কাঠ প্রভৃতি পরিষ্কার করুন এবং বসতবাড়ির ভেতরের নোংরা পরিষ্কার করে রাখুন। তাহলেই যে কোন সাপের হাত থেকে আপনারা রক্ষা পাবেন। সেই সঙ্গে অবশ্যই রাত্রিবেলা লাইট জ্বেলে বাইরে বের হন এবং বিছানা ভালো করে ঝেড়ে মশারি টানিয়ে দেখেশুনে ঘুমান।
ঘটনার বিবরণ
ঘটনাটি দেখে আরো অবাক লাগে সাপটি কামড় দেওয়ার পরও যুবকগুলোর সাপের কামড় সম্পর্কে বা বিষ সম্পর্কে কোন সচেতনতা নেই। তাই তারা সেখানেই বসে থাকে এবং ঘটনার গুরুত্ব উপলব্ধি না করে সামান্য কিছু টাকার অজুহাত দেখায়। অবশেষে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলেও সেখানে ঐ সাপের বিষের ভ্যাকসিন না থাকায় তাকে রংপুর মেডিকেল হাসপাতালে ট্রান্সফার করে দেওয়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে যুবকের যা হওয়ার হয়ে গেছে ডাক্তার জানায় সে আর বেচে নেই।
বিশেষ সতর্কীকরণ
এই ঘটনাটি থেকে আমাদের একটা শিক্ষা নেওয়ার প্রয়োজন আছে যে, ভালো করে না জেনে না বুঝে শুধুমাত্র আবেগের বসে বা সোশ্যাল মিডিয়াতে কতগুলি লাইক বা ভিউ পাওয়ার উদ্দেশ্যে ভিডিও ভাইরাল করতে গিয়ে অসময়ে নিজের জীবনের ঝুঁকি নেওয়া কখনোই উচিত নয়।