আজকে আমাদের ব্লগের বিষয় হলো- রুই মাছের রেসিপি| রুই মাছ আমাদের দেশের অতি পরিচিত একটি মিষ্টি জলের সুস্বাদু মাছ। রুই মাছের ঝোল আর ভাত পছন্দ করে না এবং বাঙালি হয়তো খুঁজে পাওয়া মুশকিল কথায় আছে মাছে ভাতে বাঙালি| আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব রুই মাছের রেসিপি এই রান্নাটি। রুই একটি অতিপরিচিত মাছ। বাঙালি বহু বাড়িতেই নিয়মিত এই মাছ রান্না হয়।
Table of Contents
রুই মাছ খেলে কি হয় / রুই মাছের পুষ্টিগুণ
রুই মাছ খেতে খুবই সুস্বাদু এবং শরীরের জন্য খুব উপকারী একটি মাছ। রুই মাছে রয়েছে- পটাশিয়াম,সোডিয়াম,ক্যালসিয়াম, , ভিটামিন সি এম সি জি, ফসফরাস, আয়রন ইত্যাদি। খাওয়ার তিন ঘন্টার মধ্যে হজম হয় এই মাছ। রুই মাছ খেলে কি হয় তা আজকে আমি আপনাদের জানাবো|
এ মাছ নিয়মিত খেলে দেহের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ, দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি, হাটু কিংবা আমাদের দেহের নানা জয়েন্টের ব্যথা দূর করে, রক্ত প্রবাহের উন্নতি, ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি সহ নানা কাজ করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে পারে এই মাছে থাকা কিছু উপাদান। পাশাপাশি এই মাছে ক্যালোরির পরিমাণ কম থাকায় যাঁদের অতিরিক্ত মেদ রয়েছে, তাঁরা নিয়মিত এই মাছ খেতে পারেন|
রুই মাছের রেসিপি
ঠাকুরবাড়ি অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়িতে নিত্যদিনই এই রুই মাছের রেসিপি রান্না করা হতো। এমনকি রবীন্দ্রনাথের প্রিয় মাছ ছিল রুই মাছ। ঠাকুরবাড়ির হেসেলে নানা পদ রান্না হলেও রুই মাছের রেসিপি অবশ্যই তৈরি হতো। প্রতিদিন তৈলাক্ত নানা খাওয়ার খেতে কারোরই ভালো লাগেনা আমাদের সেই ফিরে যেতে হয় রুই মাছের পাতলা ঝোল এর দিকে। রুই মাছের ঝোল প্রতিদিন খেলে ও আমাদের শরীরে কোন ক্ষতি হয় না বরঞ্চ শরীরে অনেক শক্তি পাওয়া যায়| গ্রীষ্মকালে প্রতিদিন রুই মাছের ঝোল খেলে মানবদেহে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমে যায়|
চলুন দেখে নিন রুই মাছের রেসিপি রান্না করতে কি কি উপকরণ দরকার
উপকরণ:
- ১. মাছ: রুই চার টুকরো
- ২. আলু: দুই পিস মাঝারি সাইজে
- ৩. টক দই: এক কাপ
- ৪. পেঁয়াজ: আধ কাপ
- ৫. আদা বাটা: দু’চা চামচ
- ৬. কালো জিরে: হাফ চামচ
- ৭. লবঙ্গ: ছ’টি
- ৮. দারচিনি: এক চা চামচ
- ৯. তেজপাতা: দু’টি
- ১০.কাঁচালঙ্কা: আটটি
- ১১. কাশ্মীরি লাল লঙ্কা গুঁড়ো
- ১২. গোলমরিচ: এক চা চামচ
- ১৩. পেঁয়াজকুচি: এক কাপ
- ১৪.টমেটো কুচি: এক কাপ
- ১৫.ধনেপাতা কুচি: হাফ কাপ
- ১৬.সরিষার তেল: ৩০ গ্রাম (ঝোল রান্নার জন্য)
- ১৭. নুন: স্বাদ মতো
- ১৮. চিনি: স্বাদ মতো
- ১৯. জায়ফল ও জয়িত্রীর গুঁড়ো: দু’চা চামচ
আরো পড়ুন: খিচুড়ি রান্নার রেসিপি-নিরামিষ খিচুড়ি
প্রণালী:
১. প্রথমে একটি রুই মাছকেই ভালো করে কেটে তার থেকে চার টুকরো মাছ নিয়ে নিন|
২. মাছের মধ্যে নুন হলুদ মাখিয়ে নিন| মাছ ভাজার সময় মাছের ছাল যাতে না উঠে যায় তার জন্য খানিক শুকনো লঙ্কার গুঁড়ো ও সরিষার তেল মাখিয়ে নিন।
৩.তারপরে একটি কড়াই উননে বা গ্যাসে বসিয়ে তাতে সরিষার তেল দিয়ে গরম করুন| নুন হলুদ মাখিয়ে রাখা মাছগুলো হালকা করে তেলে ভেজে নিয়ে তুলে নিন|
৪. আলুতে নুন মাখিয়ে নিন মাছ ভাজার তেলেই আলু ছেড়ে দিন| গায়ে লালচে রং আসা পর্যন্ত ভেজে নিন|
৫. তারপর তেল গরম করে তাতে কালো জিরে দারচিনি তেজপাতা লবঙ্গ গোলমরিচ গোটা কাঁচা লঙ্কা ও মিহি করে কুচিয়ে রাখা পিঁয়াজ দিয়ে ভাজতে থাকুন|
৬. রুই মাছের ঝোলে বেশি পেঁয়াজ দেবেন না তাহলে জল কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে|
৭. মিশ্রণটি ভাজা হয়ে আসলে এর মধ্যে দিয়ে দিন আদা বাটা, কাশ্মীরি লঙ্কার গুঁড়ো, নুন, চিনি সবগুলো মিশ্রণকে মসলার কাঁচা গন্ধ কাটা পর্যন্ত ভালো করে ভাজতে থাকুন|
৮. মসলা ভাজা হয়ে আসলে এরপর ভেজে রাখা আলু মসলার মধ্যে দিয়ে দিন অল্প নাড়াচাড়া করে জল ঢেলে দিন। খুব বেশি জল দেবেন না যতটুকু ঝোলের প্রয়োজন সেই অনুযায়ী জল দেবেন।
৯. এরপর চাপা দিয়ে গ্যাস সিম করে দিন| আলু সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন|
১০. আলু সেদ্ধ হয়ে গেলে মিহি করে কেটে রাখা টমেটো ও টক দই দিয়ে দিন।
১১. জল ফুটে উঠলে ভেজে রাখা মাছগুলো ওর মধ্যে দিয়ে দিন। তিন থেকে চার মিনিট ফুটিয়ে নিন|
১২. সবশেষে ঝোলের মধ্যে কুচিয়ে রাখা ধনেপাতা আর দুটো কাঁচা লঙ্কা দিয়ে দিন | দেখতে দারুন সুন্দর লাগবে, খেতেও হবে সুস্বাদু|
১৩. ভাতের সাথে গরম গরম রুই মাছের ঝোল পরিবেশন করুন। এই ঝোলের স্বাদ এতটাই ভালো হয় যে মাংসের ঝোল খেতে ভুলে যাবেন| রুই মাছের রেসিপি এই রকম করে রান্না করে খেলে আপনাদের শরীর ও মন দুটোই তাজা থাকবে।
আরো জানুন: খিচুড়ি রান্নার রেসিপি
ব্লগ-টি পুরোপুরি পড়ার জন্য আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ|সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন|
1 thought on “দারুণ স্বাদের রুই মাছের রেসিপি”