খিচুড়ি রান্নার রেসিপি – নিরামিষ খিচুড়ি

খিচুড়ি হল একটি খুবই স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু ভাত জাতীয় খাবার| খিচুড়ি রান্নার রেসিপি বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধরনের| ভারত বাংলাদেশ সহ দক্ষিণ এশিয়ার নানা দেশগুলিতে অন্যতম জনপ্রিয় খাবার হল এই খিচুড়ি। বাঙালি, বর্ষাকাল, শীতকাল এবং খিচুড়ি এর মধ্যে অবিচ্ছেদ্য একটা সম্পর্ক দীর্ঘকাল থেকেই গড়ে উঠেছে| কথায় আছে বর্ষার দিনে জগাখিচুড়ি রান্না করা। মানেই হল সবকিছু দিয়ে চালে ডালে খিচুড়ি রান্না করা।

বৃষ্টির দিনে বাঙালি খিচুড়ি খেতে খুবই পছন্দ করে আর তার সাথে বেগুনি আর পাপড় ভাজা হলে জমে পুরো ক্ষীর| বাইরে সোদে মাটির গন্ধ আর বাড়িতে খিচুড়ি খাওয়ার মজাই আলাদা| শীতকালে কিংবা বর্ষাকালে এমন কোন বাঙালি রান্নাঘর নেই যেখানে খিচুড়ির মত প্রিয় রান্নাটি হয় না|আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব নিরামিষ খিচুড়ি রান্নার রেসিপি, আপনারা অবশ্যই শেষ পর্যন্ত ব্লগ পোস্টটি মন দিয়ে পড়ুন|অনেক মানুষের ইমোশান জড়িত আছে এই খিচুড়ির সাথে|

#১.খিচুড়ির ইতিহাস

বাঙালি পরিমণ্ডলে খিচুড়ি উচ্চারণ করা হলেও নানা জায়গায় খিচুরি নামেও পরিচিত| খিচুড়ি এই শব্দটি সংস্কৃত শব্দ থেকে এসেছে|হিন্দিভাষীর মানুষেরা খিচুড়ি বলে থাকেন এবং উর্দুভাষীর মানুষেরা (খিচুরি) র ব্যবহার করে থাকেন নানা জায়গায় খিচুড়ি নামের মতভেদ দেখা যায়। ঐতিহাসিক মতানুসারে ভারতীয় উপমহাদেশে চালের সাথে ডাল মেশানো খিচুড়ি খাবারটি খুবই জনপ্রিয় ছিল।

হায়দ্রাবাদের রান্নাঘরেও খিচুড়ি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল পঞ্চদশ শতক থেকেই ভারতে প্রায় সব বাড়িতেই খিচুড়ি খাওয়ার রেওয়াজ ছিল। ইতিহাসের পাতায় পাই অনেক ঐতিহাসিক ব্যক্তিও তার রাজকীয় রান্নাঘরে খিচুড়ি রান্নার প্রচলন রেখেছিলেন।|সম্রাট আওরঙ্গজেবর প্রিয় খিচুড়ি ছিল ডিম মাংস মাছ নানা ধরনের আমিষ খিচুড়ি|এর থেকে আমরা বুঝতে পারি খিচুড়ি এই রান্নাটি বাঙালির সাথে খুব ওতপ্রোত ভাবেই জড়িত রয়েছে|

খিচুড়ি রান্নার রেসিপি
খিচুড়ি রান্নার রেসিপি

#২. সাহিত্যে খিচুড়ির কথা

বাঙালির কথ্যরীতিতে হচপচ বা তাল পাকানো প্রতিশব্দ হিসেবে খিচুড়ি পরিণত হয়েছে| বাস্তবে জগাখিচুড়ি বলে এক রকমের খিচুড়ি আছে, তা এই জগন্নাথ দেবের মন্দিরের খিচুড়ির নাম অনুসারী হয়েছে। অর্থাৎ শব্দের প্রসারন থেকে সংকোচনী পরিণত হয়েছে। ঠিক যেমন আগে পরমান্ন মানে অনেক খাওয়ার কে বোঝাত কিন্তু এখন পরমান্ন মানে শুধুমাত্র ভাত-কেই বোঝায়|

প্রাচীন সাহিত্য থেকে আমরা পড়লে আমরা জানতে পারবো পুরীর জগন্নাথ দেবের মন্দিরে প্রসাদ হিসেবে ভক্তদের প্রতিদিন খিচুড়ি বিতরণ করা হয়।”জগন্নাথ দেবের খিচুড়ি” লোকোমুখে সংক্ষেপে প্রচলিত আছে “জগাখিচুড়ি” নামে।

#৩.খিচুড়ির প্রকারভেদ

খিচুড়ি রান্নার নানা ধরনের রয়েছে| নিরামিষ কিংবা আমিষ সব রকমই খিচুড়ি বাঙালির রান্নাঘরে তৈরি হয়ে থাকে। বাঙালির ঘরে খিচুড়ি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় প্রচুর –

বাঙালির রান্না ঘরে আমিষ খিচুড়ি গুলি হল-

মাংস দিয়ে খিচুড়ি

মাছ দিয়ে খিচুড়ি

মাশরুম দিয়ে খিচুড়ি

বাঙালির রান্নাঘরে নিরামিষ খিচুড়ির তালিকায় রয়েছে

মুগ ডালের খিচুড়ি

সবজি খিচুড়ি

সাবুর খিচুড়ি

গমের খিচুড়ি

ভুনা খিচুড়ি

মসুর ডালের খিচুড়ি

ফলের খিচুড়ি

#৪.খিচুড়ির উপকারিতা

খিচুড়িতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, আয়রন ফাইবার ও আঁশযুক্ত খাবার রয়েছে|খিচুড়িতে যেহেতু অনেক ধরনের উপাদান ব্যবহার করা হয় তাই ভিন্ন ভিন্ন উপাদানের উপস্থিতির কারণে নানা ধরনের উপকারী ভূমিকা পালন করে এই খিচুড়ি খাওয়ারটি| এই মিশ্রণে চাল দেওয়া হয়, চালে থাকা কার্বোহাইড্রেট দেহে উপস্থিত টক্সিন উপাদান বের করে দেয় এবং সাথে সাথে ত্বকে আনে উজ্জ্বলতা|

এছাড়াও খিচুড়িতে এমাইনো এসিড, কার্বোহাইডেট, ভিটামিন সি. ক্যালসিয়াম এই ধরনের একাধিক খনিজ রয়েছে , যা শরীরে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়| এই খাবারটি বেশ সহজ পাচ্য হওয়ার জন্য অসুস্থ এবং দুর্বল মানুষকে খিচুড়ি খেতে দেওয়া হয়। বাচ্চাদের পেটে সহজে শক্ত খাবার হজম হয় না বলে, তাদেরকে খুব নরম খিচুড়ি খেতে দেওয়া হয়। যার ফলে বাচ্চারা নানারকম পেটের অসুখ থেকে নিরাপদ থাকে|

#৫.খিচুড়ি রান্নার রেসিপি

আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব সুগন্ধি গোবিন্দভোগ চালের নিরামিষ খিচুড়ি| এই খিচুড়ি স্বাদে-গন্ধে ভরপুর হয়| খুব সহজেই এই পুষ্টিকর খাবারটি আপনারা বাড়িতে চটজলদি বানিয়ে ফেলতে পারেন। চলুন তাহলে দেখে নিন কিভাবে ও কি কি উপকরণ দিয়ে এই নিরামিষ খিচুড়ি রান্নার রেসিপি তৈরি করবেন|

নিরামিষ খিচুড়ি
নিরামিষ খিচুড়ি

উপকরণ

  • গোবিন্দভোগ চাল – ২০০ গ্রাম।
  • মুগ ডাল – ২০০ গ্রাম।
  • কড়াইশুঁটি – ১০০ গ্রাম।
  • টম্যাটো – ১ টি।
  • আলু – ২ টি।
  • ফুলকপি – ১/২ টি।
  • বাধাকপি – ১/২ টি।
  • গাজর – ১ টি।
  • পাঁচফোড়ন – ১/৪ চামচ।
  • গোটা জিরে।
  • তেজপাতা – ১ টি।
  • শুকনো লঙ্কা – ২ টি।
  • কাঁচা লঙ্কা পরিমাণ মতো।
  • সামান্য আদা বাটা।
  • জিরে বাটা।
  • ধনে গুঁড়ো।
  • লঙ্কা, লবণ – স্বাদ মতো।
  • ঘি।
  • তেল।

প্রস্তুত প্রণালী:-

স্টেপ ১:

খিচুড়ি (khichuri) তৈরির জন্য প্রথমে চাল ভালো করে ধুয়ে জল ঝরিয়ে রাখুন। মুগ ডাল ভালো করে জল দিয়ে ধুয়ে জল ঝরিয়ে নিন।

স্টেপ ২:

যতক্ষণ না পযন্ত  ডাল থেকে একটা সুন্দর গন্ধ বের হয় একটা কড়াই গরম করে মুগ ডালটি ভেজে নিন এবং লাল লাল হচ্ছে ততক্ষণ ডালটি ভাজতে থাকুন। ডাল ভাজা হয়ে গেলে নামিয়ে রেখে ধুয়ে রাখা চাল হালকা করে ভেজে নিন।

স্টেপ ৩:

এবার কড়াইতে সামান্য সরিষার তেল দিয়ে কড়াইশুঁটি বাদে বাকি সব কাটা সবজি গুলোকে কড়াইতে তেলের মধ্যে দিয়ে হালকা করে ভেজে নিন। এবার পাশে একটি হাঁড়িতে জল ফুটতে বসিয়ে দিন।

স্টেপ ৪:

হাঁড়িতে জল ফুটতে লাগলে তাতে চাল ও ডাল দিয়ে একটু নেড়েচেড়ে কড়াইশুঁটি বাদে বাকি সব সবজি, কাঁচা লঙ্কা, লবন, সামান্য হ্লুদ দিয়ে সব কিছুকে মিশিয়ে দিন।

স্টেপ ৫:

কিছুক্ষণ পরপর হাঁড়ির সবজি চাল ডাল নাড়তে থাকুন না হলে খিচুড়ি হাঁড়ির নিচে লেগে যাবার সম্ভাবনা থাকে| চাল ডাল সবজি সব সেদ্ধ হয়ে গেলে এই মিশ্রণের মধ্যে কড়াইশুঁটি দিয়ে নামিয়ে দিন। কড়াইশুঁটি আগের থেকে দিয়ে দিলে কড়াইশুঁটি খিচুড়ির মধ্যে নরম হয়ে গলে যাবে তাই আর খুঁজে পাওয়া যাবে না|

স্টেপ ৬:

এরপর আর একটি কড়াইতে সামান্য সরিষার তেল গরম করে ততে তেজপাতা, শুকনো লঙ্কা , পাঁচফোড়ন, আদা-জিরে বাটা দিয়ে দিন।

স্টেপ ৭:

এবার একটু নেড়েচেড়ে তা নামিয়ে রাখা খিচুড়ি মধ্যে দিয়ে দিন আর সঙ্গে এক চামচ ঘি দিয়ে ভালো করে নেড়েচেড়ে মিশিয়ে দিন। তাহলেই তৈরি হয়ে যাবে স্বাদে গন্ধে ভরপুর আমাদের নিরামিষ সবজি খিচুড়ি। তারপরে গরম গরম পরিবেশন করুন এই নিরামিষ খিচুড়ি|   

আরো জানুন: নিরামিষ দই পটল রেসিপি- আমার ঠাকুমার হাতের প্রিয় রান্না

শেয়ার করুন:
Titli Ray

আমি Titli Ray,,আমি ২০১৭ সাল থেকে লেখালেখির সঙ্গে এবং ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে জড়িত ও ভিডিও তৈরি করি। আমি আপনাদেরকে আমার অভিজ্ঞতা ও তথ্য শেয়ার করব। ধন্যবাদ।